নিউজ ডেস্ক : সিলেটের কোয়ারিগুলোতে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে। সরকারের কঠোর অবস্থান এবং শ্রমিক-মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা। পরিবেশ বিপর্যয়ের অভিযোগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হলেও পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনগুলো আন্দোলনে নেমেছে।
গত ১৪ জুন সিলেটের জাফলং এলাকায় সফরকালে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল করিম খান পাথর কোয়ারির লিজ আর নবায়ন করা হবে না বলে ঘোষণা দেন। এরপর ১৬ জুন থেকে প্রশাসনের নির্দেশে কোয়ারি এলাকার পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু হয়। সর্বশেষ ৩০ জুন পর্যন্ত কেবল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১৭টি ক্রাশার মেশিন ধ্বংস, ১০টির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ১৮, ২৫ ও ২৯ জুন জাফলংয়ে আরও ১৬২টি যন্ত্রের সংযোগ কাটা হয়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি ক্রাশার মেশিন বন্ধ করা হয়েছে।
সরকারের অবস্থান ও অভিযোগ
সূত্র মতে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় রাতের আঁধারে অবৈধ উত্তোলন চলতে থাকে। সরকারের পতনের পর বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতারা এসব কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এ নিয়ে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কারও করেছে জেলা বিএনপি।
বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের ঘোষণা
পাথর উত্তোলন পুনরায় চালু এবং বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বুধবার নগরীর কোর্ট পয়েন্টে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারা ৫ জুলাই (শনিবার) থেকে পরিবহন ধর্মঘট পালনের হুমকি দেন, যদি তার আগেই দাবি পূরণ না হয়।
৫ দফা দাবি:
১. বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়া;
২. ক্রাশার মেশিন ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা;
৩. পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটক না করা;
৪. চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা;
৫. সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণ।
সমাবেশে সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সংহতি প্রকাশ করে বলেন, “শ্রমিক-মালিকদের দাবিগুলো ন্যায্য। আমরা পরিবেশবান্ধব পাথর উত্তোলনের পক্ষে। সরকার যদি দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে সিলেটের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
সমাবেশের বক্তারা প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্ত ও “জিরো টলারেন্স” নীতির সমালোচনা করে বলেন, এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তারা হুঁশিয়ার করে বলেন, দাবি মানা না হলে পরিবহন ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা হতে পারে।