বিনোদন ডেস্ক : বেশ কয়েক বছর ধরে বলিউড ইন্ড্রাস্ট্রি যেন বাঁচার জন্য লড়াই করছে। দক্ষিণী সিনেমার কাহিনী, দৃশ্য, অর্থ আয়-সবকিছুর কাছে বারবার মার খাচ্ছে বলিউড। এরই মাঝে বলিউডকে চাঙ্গা করতে অর্থের বিনিময়ে সিনেমার রিভিউর মাধ্যমে কৃত্রিম জনপ্রিয়তা তৈরির কৌশল অবলম্বন করার অভিযোগ উঠে এই ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে বলিউডের এ নোংরা দিকটি তুলে ধরেছে। তবে এই পদ্ধতিটিই বর্তমানে বলিউডের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। দিন দিন এই পদ্ধতির কারণেই ধ্বংস হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রির ঐতিহ্য।
টাকার বিনিময়ে সিনেমার রিভিউয়ের বিষয়টি আবারও ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে আসে জিগরা (২০২৪) সিনেমার ব্যর্থতার পর। ধর্ম প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এবং আলিয়া ভাট অভিনীত এই সিনেমার প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত জনপ্রিয়তা ও অর্থপ্রদত্ত রিভিউ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু প্রচুর প্রচার সত্ত্বেও এটি ব্যর্থ হয় এবং মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বাজেট পুনরুদ্ধার করতে পারে।
কীভাবে অর্থের বিনিময়ে রিভিউ কাজ করে?
বর্তমানে বলিউড সিনেমার ৭০-৮০% রিভিউই অর্থপ্রদত্ত, যেখানে ইনফ্লুয়েন্সার, ট্রেড অ্যানালিস্ট এবং সংবাদমাধ্যম সিনেমার প্রচারে টাকা নিয়ে ইতিবাচক রিভিউ দেয়। এই প্রচারের জন্য ৭০ লাখ থেকে ৭ কোটি টাকা পর্যন্তও খরচ করা হয়। সিনেমার প্রচারের জন্য কিছু ইনফ্লুয়েন্সারকে আইফোন, বিলাসবহুল হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়।
তবে এই কৌশল এখন ব্যর্থ হচ্ছে, কারণ দর্শকরা আর এসব ভুয়া রিভিউর ওপর বিশ্বাস রাখছেন না। অন্যদিকে, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, ডিজনি+-এর মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোও এখন সিনেমা কেনার ক্ষেত্রে নতুন নীতি গ্রহণ করেছে। তারা স্টার পাওয়ারের ভিত্তিতে নয়, বরং সিনেমার আসল সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে কিনছে, ফলে বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন এখন আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।
বলিউডের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
যদিও বলিউড প্রচারে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে, তবুও বেশিরভাগ সিনেমাই ফ্লপ হচ্ছে। ২০২৪ সালে শুধুমাত্র চারটি হরর সিনেমা সফল হয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা এখন বলিউডের তুলনায় অনেক ভালো পারফর্ম করছে এবং ইন্ডাস্ট্রিতে আধিপত্য বিস্তার করছে।
‘জিগরা’ সিনেমার ব্যর্থতার পর করণ জোহর ধর্ম প্রোডাকশনের ৫০ ভাগ মালিকানা ভারতীয় বিলিয়নিয়ার আদার পুনাওয়ালার কাছে ১৪০৮ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন, যা বলিউডের গভীর অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। অন্যান্য স্টুডিওগুলিও টিকে থাকার জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছে।
চলচ্চিত্র সমালোচকদের ‘চাঁদাবাজি’
বলিউড প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া সমালোচকদের (রিভিউয়ারদের) উৎসাহিত করেছিল, কিন্তু এখন অনেক সমালোচকই প্রযোজকদের ব্ল্যাকমেইল করছে।
এই ‘পেইড রিভিউ’ সিস্টেম এখন উল্টো বলিউডকেই চাপে ফেলেছে। অনেক ইনফ্লুয়েন্সার এখন স্টুডিও ও প্রযোজকদের ব্ল্যাকমেইল করছে—‘যদি টাকা না দেন, তাহলে নেতিবাচক রিভিউ দেব।’ এর ফলে পুরো প্রচার কৌশলটি ‘একটি সম্পূর্ণ চাঁদাবাজিতে’ পরিণত হয়েছে।
প্রযোজক গিরিশ জোহর বলেন, ‘এটি বলিউডের কর্মফল! এই স্টুডিওরাই ইনফ্লুয়েন্সারদের তৈরি করেছে, তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে, আর এখন তারাই তাদের ব্ল্যাকমেইল করছে!’
বলিউড এখন যে সংকটে পড়েছে, তার আসল কারণ হলো, তারা ভালো সিনেমা বানানোর বদলে ভুয়া জনপ্রিয়তা তৈরি করতে বেশি বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু দর্শকরা এখন এসব বোঝার মতো যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে।
বলিউডের সিনেমার পেইড রিভিউয়ের বিষয়টি শাহরুখ খান, সালমান খানের মতো বলিউডের বড় তারকারাও স্বীকার করেছেন এবং অভিনেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থপ্রদত্ত রিভিউগুলোকে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বলিউডকে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য ভুয়া রিভিউর ওপর নির্ভর না করে, বরং ভালো সিনেমা তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে।