নিউজ ডেস্ক : যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে দুর্ভিক্ষ আরও পাঁচটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মে মাসের মধ্যে আরও পাঁচটি অঞ্চলে এই সংকট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধ চলমান থাকায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা দুর্ভিক্ষ সংকটকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। খবর রয়টার্সের।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, উত্তর দারফুরের অবরুদ্ধ রাজধানী আল-ফাশিরে অবস্থিত আবু শউক এবং আল-সালাম নামক দুটি শরণার্থী শিবিরে দুর্ভিক্ষের অবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোর্দোফান রাজ্যের দুটি এলাকাও দুর্ভিক্ষের কবলে রয়েছে। আগস্টে প্রথম চিহ্নিত দুর্ভিক্ষ এখনো উত্তর দারফুরের জামজাম শিবিরে অব্যাহত রয়েছে।
আইপিসি আরও জানিয়েছে, উত্তর দারফুরের উম কাদাদাহ, মেলিট, আল-ফাশির, তাউইশা এবং আল-লাইট এলাকায় মে মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আইপিসি-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুদানের প্রায় ২৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ (মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক) জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তার জন্য নির্ভরশীল হবে। যেখানে গত জুন মাসে প্রাথমিকভাবে এই সংখ্যা ছিল ২১ দশমিক ১ মিলিয়ন।
সুদানের সরকার সম্প্রতি আইপিসি-এর কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, এই সংস্থা ‘অবিশ্বাস্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে।’
আইপিসি একটি স্বাধীন সংস্থা, যা পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থায়নে পরিচালিত হয় এবং জাতিসংঘসহ ১৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করে। এই সংস্থা ক্ষুধা সংকট নিরসনে দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সামরিক বাহিনী (এসএএফ) এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলমান। কিন্তু সরকার দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে নারাজ, কারণ এতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার এবং আরএসএফের সঙ্গে আলোচনা করার ঝুঁকি তৈরি হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিচালক জিন-মার্টিন বাউয়ার বলেছেন, ‘আমাদের কাছে খাদ্য রয়েছে, পরিবহনের জন্য ট্রাক রয়েছে, এবং কাজ করার জন্য লোক রয়েছে। শুধু নিরাপদ পরিবহনের সুযোগ দরকার।’
কিন্তু সরকার ও বিদ্রোহীদের সংঘাতে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। আরএসএফের বিরুদ্ধে খাদ্য লুটপাটের অভিযোগ উঠলেও তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সরকার বারবার আন্তর্জাতিক সাহায্যকর্মীদের ভিসা দেওয়া বিলম্বিত করছে এবং দারফুর অঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক এবং সামরিক স্বার্থ নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছে।
অক্টোবরে সরকার জাতিসংঘকে দারফুরে কর্মরত শীর্ষ মানবিক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণ কোর্দোফান এবং দারফুরের অনেক এলাকায় খাদ্যের জন্য মানুষ গাছের পাতা খেতে বাধ্য হচ্ছে। ১ দশমিক ২ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়েছে, যা বিশ্বে সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকট তৈরি করেছে।
এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা ও ত্রাণ সরবরাহ পুনরায় চালু করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিকূলতা কাটিয়ে ত্রাণ পৌঁছানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।