অনলাইন ডেস্ক – বঙ্গোপসাগরে নিম্মচাপের কারণে দুই ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ কমে গেছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানেও গ্যাসের চাপ কমেছে। পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৭০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ কমানো হয়েছে। এই অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি ও শিল্প কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট। এই অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে।
এলএনজি সরবরাহ কমার বিষয়টি জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও। শনিবার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিুচাপের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এলএনজি সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সরবরাহে স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। তবে কী পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ কমানো হয়েছে সেটা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি।
পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস সরবরাহের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ মে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ হয় ১ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট। আর সব মিলিয়ে সরবরাহ হয় ৩ হাজার ৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে শনিবারের হিসাবে দেখা গেছে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট (৭০ কোটি) এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে। অর্থাৎ জাতীয় গ্রিডে এলএনজির সরবরাহ আছে ৪০০ মিলিয়নের কাছাকাছি।
কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। জাহাজে করে এলএনজি কিনে আনার পর তা টার্মিনালের মাধ্যমে রিগ্যাসিফিকেশনের পর পাইপলাইনে করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। ফলে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকলে ভাসমান টার্মিনালের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।
শনিবার পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, সাগরে নিুচাপ চলমান থাকায় দুর্ঘটনা রোধে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে থাকা দুই এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতেও এলএনজি সরবরাহ ১০৮ কোটি ঘনফুট থেকে ৩৮ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। এটি আরও কমতে পারে। এতে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট। এ কারণে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দেশে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংও বেড়েছে। সোমবার পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ এমন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা।
এর আগে গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের একদিন আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তাতে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ কমায় সংকট দেখা দেয়। গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি ঘন ঘন লোডশেডিং শুরু হয় দেশজুড়ে। তখন সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লেগে ছিল।