লেবাননের উত্তরাঞ্চলের বেদ্দাবি শিবির লক্ষ্য করে চালানো ইসরাইলের ড্রোন হামলায় স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ হামাসের এক সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। অব্যাহত এ হামলার মধ্যেই ইরান, লেবানন ও গাজা লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের মিডিয়া।
ওদিকে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আর কোনো হামলা হলে ইসরাইলের সব গ্যাসক্ষেত্র একসঙ্গে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। খবর জেরুসালেম পোস্ট, রয়টার্স, স্কাই নিউজ ও আল-জাজিরার।
হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন একটি সূত্র শনিবার জানিয়েছে, পরিবারের তিন সদস্যের সঙ্গে হামাসের আল কাসাম ব্রিগেডের নেতা সাঈদ আতাল্লাহ নিহত হয়েছেন। উত্তর লেবাননের ত্রিপোলিতে একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) লেবাননের দক্ষিণে একটি হাসপাতালের পাশে ‘হিজবুল্লাহ কমান্ড সেন্টার’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রের বরাদ দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলার পর থেকে হিজবুল্লাহর প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর চাচাতো ভাই হাসেম সাফিয়েদিনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে নাসরুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছিল।
ইসরাইলের সরকারি গণমাধ্যম কেএএন এবং অন্যান্য গণমাধমের খবরে বলা হয়েছে, ইরান, লেবানন এবং গাজা লক্ষ্য করে একাধিক দিক দিয়ে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। ইসরাইলে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মোক্ষম জবাব দিতে দেশটির সেনাবাহিনী এ পরিকল্পনা করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইরানের আধিপত্যবাদের বিরোধী পশ্চিমা সহযোগীরাও এ অভিযানে তাদের সঙ্গে যোগ দেবে বলে ইসরাইল আশা করছে। ওই অভিযানের ব্যাপারে আলাপ করতে ওই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রধান ইসরাইলে আসার প্রাক্কালে এ খবর জানা গেল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা অভিযানের এক বছর পূতিতে ‘নেটজারিম করিডর’-এর আশপাশের এলাকা ঘিরে জোরালো অভিযানের পরিকল্পনা করেছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। আর লেবাননের অভিযান হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। সেনাবাহিনী একে দক্ষিণ লেবাননের সীমিত অভিযানকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে বলে উল্লেখ করেছে।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় আইডিএফ জানিয়েছে, গত ১ অক্টোবর লেবাননে ইসরাইলের স্থল বাহিনী অভিযান শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত হিজবুল্লাহর অন্তত ২৫০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন পর্যায়ের কমান্ডার ছিলেন ২১ জন, বাকিরা সবাই সাধারণ যোদ্ধা।
এদিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় দুই হাজারের বেশি মানুষ শহিদ হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরাইলের ব্যাপক হামলায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ২৩ জন বেসামরিক লেবাননি শহিদ হয়েছেন। এদের মধ্যে ১২৭টি শিশু ও ২৬১ জন নারী রয়েছেন। একই সময়ে আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৫২৬ জন। ইসরাইলের নির্বিচার হামলার কারণে এ পর্যন্ত ১২ লাখ লেবাননি ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
ইসরাইলের সব গ্যাসক্ষেত্র একযোগে ধ্বংস করা হবে:
এদিকে ইরানে নতুন করে যেকোনো ধরনের আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করলে ইসরাইলের সব জ্বালানি স্থাপনা একসঙ্গে ধ্বংস করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)।
আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল আলী ফাদাভি শুক্রবার লেবাননের আল-মায়াদিন টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানে হামলা চালালে নিজের অস্তিত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে ইহুদিবাদী ইসরাইল।
তিনি বলেন, ‘দখলদার সরকার যদি কোনো ভুল করে, তাহলে আমরা এর জ্বালানির সব উৎস, সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সব তেল শোধনাগার ও গ্যাস ক্ষেত্রে একযোগে হামলা চালাব।’
আইআরজিসির এ কমান্ডার বলেন, ইরান একটি বিশাল দেশ, যার রয়েছে বহুমুখী অর্থনৈতিক কেন্দ্র। অথচ ইসরাইলের মাত্র তিনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও কয়েকটি শোধনাগার রয়েছে।
জেনারেল ফাদাভি বলেন, ‘ওইসব কেন্দ্রে একযোগে হামলা চালানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।