মাস তিনেক আগে বাহরাইনে থাকা আমার এক পরিচিত লোক হঠাৎ ফোন দিয়ে বলে, সে একবছরের মধ্যে দেশে আসবে। দেশে আসার আগে তাকে যেনো আমি একটা নিউজ পোর্টালের ডোমেইন নিয়ে দিতে সাহায্য করি। কথা শুনে আমার কপালে ভাজ উঠলো, আমার সোজসাপটা প্রশ্ন, “আপনি নিউজের কিছু বুঝেন? আপনিতো ভিন্ন ট্র্যাকের” (সে বিদেশে ড্রাইভিং করে এটা আমি আর বলিনি যদি ইনসাল্ট ফিল করে)। তার পাল্টা প্রশ্ন, “বুঝার কি আছে? আমি ডোমেইন কিনে সম্পাদক হবো।” সে আমাকে আরও বুঝালো, এখন ডোমেইন নিয়ে বিদেশ থেকে সে নিউজ কপি পেস্ট করে চালাবে। বাহরাইনে সন্ধ্যার পর সে ফ্রি থাকে। একবছর পর একেবারে দেশে এসে ছোট একটা অফিসে দু-একজন স্টাফ নিয়ে সে চালাবে। দেশে এসে সে প্রবাসী থেকে সম্পাদক পরিচয়ে পরিচিত হবে। এটাই তার টার্গেট। আমি আর তার সাথে কথা বাড়ালাম না। তাকে ইনডাইরেক্ট সহযোগিতা করতে পারবো না বলে ফোন রেখে দেই। গেলো মাসে দেখি সে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে তার পোর্টালের লিংক পাঠায়। লিংকের নিচে লেখা- “সম্পাদক হয়ে গেলামতো”।
বলতে চাইছি, এভাবে দেশে চাইলে যে কেউ অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে সম্পাদক বনে যেতে পারেন। পেশাদার সাংবাদিকরা বহুবছর সাংবাদিকতা করেও যেখানে সম্পাদক হওয়ার কথা ভাবতে পারেন না। সেখানে পেশাদার সাংবাদিকতা না করেই সম্পাদক! যদিও একজন সম্পাদকের যোগ্যতা, দায়িত্ব, মর্যাদা, গ্রহনযোগ্যতা সম্পর্কে এরা ওয়াকিবহাল নয়। কিন্তু এসব ধুর্তরা একটা ডোমেইন কিনে সম্পাদক বনে যান! বিষয়টা যে এ দেশে নতুন, তা-না। কয়েকবছর ধরে এ মাস্তানি চলে আসছে, থামছেই না। এসব অসাংবাদিকদের থামানোরও কেউ নেই।
জেলা-উপজেলা পাড়া মহল্লায় এমন শত শত নামসর্বস্ব অনলাইন আছে৷ এক দু-হাজার টাকা খরচ করে একটা ডোমেইন নিয়েই এদের ব্যবসা শুরু। মূলত মূলধারার সংবাদমাধ্যম থেকে কপি পেস্টে ভর করে চলে এসব পোর্টাল৷ এর বাইরে যেসব হাবিজাবি কন্টেন্ট থাকে তা সবই ধান্দার, ফরমায়েশি কিংবা কাউকে ঘায়েল করার নিউজ৷
আশ্চর্য লাগে, এ দেশে যে কেউ একটা ডোমেইন নিয়েই সে নিউজ প্রকাশ করতে পারে। মানে তারও সংবাদমাধ্যম আছে! সংবাদমাধ্যমে তারও মালিকানা আছে। কি ভয়াবহ ব্যাপার!
দেশে এখন রীতিমতো নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালের বিষ্ফোরণ! এসব অনলাইন পত্রিকার কারণে দেশের নামকরা নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরাও বিব্রত হচ্ছেন। অনলাইন মিডিয়ার মতো সম্ভাবনাময় একটা খাতকে অপেশাদার মানুষ নষ্ট করে ফেলছে। এক-দু-হাজার টাকায় যখন ড্রাইভার-কবিরাজও ডোমেইন নিয়ে সাংবাদিকতার পরিচয় দিচ্ছে তখন সাধারণ মানুষের কাছে সাংবাদিকতার মর্যাদা হারাচ্ছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের এখন এ দিকে নজর দেয়া উচিত। চাইলেই এ দেশে যে কেউ যেনো সহজে পোর্টাল দিয়ে সম্পাদক কিংবা সাংবাদিক বনে যেতে না পারেন। একটি রাষ্ট্রে কোনো সংবাদমাধ্যম চালানোর তালা-চাবিতো যে কারো কাছে দেয়া যেতে পারে না৷ পেশাদার সাংবাদিকতার স্বার্থে এখন অপেশাদারদের ঠেকাতে হবে।
আদিত্য আরাফাত
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.
Asian News 24 BD