নিউজ ডেস্ক : যশোরের শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত থেকে একই দিনে একাধিক ক্ষত চিহ্নসহ তিনটি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন জায়গা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় ও পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) নির্যাতনের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বশেষ বিকাল তিনটার দিকে শার্শা উপজেলার অগ্রভূলোট গ্রামের কাদেরের মোড়ে ইছামতী নদীর পাড়ে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা এসে মরদেহটি উদ্ধার করে। নামে বুধবার
নিহত ওই ব্যক্তির নাম, সাকিবুল হাসান (৩০)। যশোরের চৌগাছা উপজেলার শাহাজাদপুর গ্রামের জামিল ঢালির ছেলে।
এর আগে সকালে অগ্রভূলোট সীমান্ত থেকে জাহাঙ্গীর আলম (৫০) ও পুটখালি সীমান্ত থেকে সাবু হোসেনের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সাবু হোসেন বেনাপোল পোর্ট থানার দিঘীরপাড় গ্রামের মৃত আরিফ হোসেনের ছেলে ও জাহাঙ্গীর আলম একই থানার কাগজপুর গ্রামের মৃত ইউনুচ আলী মোড়লের ছেলে।
স্থানীয় ও চোরাকারবারী সূত্রে জানা গেছে, ৮/১০ জনের একটি দল অবৈধ পথে ভারত সীমান্তে চোরাচালানের পণ্য আনতে যায়। এদের মধ্যে ৩/৪ জন ভারতীয় বিএসএফের হাতে আটক হয়। বাকীদের কোন খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। বিএসএফ আটককৃতদের বেদম মারপিট করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে রাতের কোনো এক সময় সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে তাদের মরদেহ ফেলে রেখে দেয়।
আজ সকালে স্থানীয় লোকজন মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দেয়। পরে সকালে দুটি ও বিকেলে একটি মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলোর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। হাতে দড়িও বাঁধা আছে।
নিহত জাহাঙ্গীরের স্বজন আব্দুর রহিম জানান, বিএসএফ নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে। তাকে না মেরে আইনের হাতে তুলে দিলে একদিন ফিরে আসতো। আমরা এ জঘন্য হত্যার বিচার চাইছি।
সাবু হোসেনের স্ত্রী হাসি বেগম জানান, তার স্বামী বাড়ি থেকে কাজের কথা বলে বেরিয়েছিল। পরে শুনতে পারি বিএসএফ তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। তার সাথে মানুষ তাকে নদী থেকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসে। তার হাত-পা ভেঙে দিয়ে কব্জি কেটে দেয় বিএসএফ। এখন আমাদের দেখার আর কেউ থাকলো না।
বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশের ওসি রাসেল মিয়া মিয়া জানান, সীমান্ত থেকে তিন বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাদের বাড়ি বেনাপোলে। তিন জনেরই শরীরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কোপানো ও জখমের চিহ্ন রয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কিভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে আমরা তদন্ত করছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে মৃত্যুর কারণ জানাতে পারবো বলে তিনি জানান।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শার্শা সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড় থেকে সকালে দুটি ও বিকেলে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তাদের গায়ে একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শার্শা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।