আড়াই মাসেও জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা জানাতে গড়িমসি করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের জনগণ সন্দেহের চোখে দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীতে ‘শহীদ’ ৭টি পরিবারের সাথে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এ দিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যাত্রাবাড়ি-ডেমরায় নিহত এসব শহীদ পরিবারের খোঁজখবর নেন সেলের সদস্যরা। তারা স্বজন হারানো এসব পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, আপনারা সংস্কার করুন। কিন্তু নির্বাচনের তারিখ বলতে আপনাদের এত সংশয় হচ্ছে কেন? যা কিছু হবে, জনগণের কাছে সেটা স্পষ্ট করে বলতে হবে। মানুষ তো এসব বিষয়ে সন্দেহ করে। আপনারা সংস্কারের জন্য কমিশন করলেন, সব করলেন- এটা কত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে, কত দিনের মধ্যে একটা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে- সেটা দেশবাসীকে জানান। যে নির্বাচনে গত ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি, এমন নির্বাচন নয়। নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে কোন দলকে ভোট দিবে, কাদেরকে নির্বাচিত করবে, কে সরকার গঠন করবে। স্পষ্টতা এবং পথনকশা- এই দুইটা হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। আপনারা সময়সীমা বলতে গড়িমসি করছেন- এইটা তো মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছে।
তিনি আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত মানুষ। বাংলাদেশের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাকে সর্বাগ্রে দেখতে হবে- মানুষ কোনটাতে বাঁচে, মানুষ কোনটাতে স্বস্তি লাভ করে। নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে ঠিকমতো খেতে পারে, সেটার জন্য সবার আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। অনেক জিনিসের শুল্ক কমিয়েছেন, কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ- এগুলোর কিন্তু দাম কমেনি। এগুলোর জন্য দায়ি সিন্ডিকেট। এই আওয়ামী সিন্ডিকেটবাজদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যথায় গণতন্ত্রের যে চেতনা, আন্দোলনের যে চেতনা, যারা জীবন দিয়েছে- তাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই যে তিনি অবলম্বন করেননি। দেশের সন্ত্রাসী, চোর, বদমাইশ, ডাকাত- এদেরকে তিনি বিচারের আওতায় আনেননি। শেখ হাসিনার অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন, তাদের কারাগারে নিয়েছেন। যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা কোনো রাজনীতিই করেন না, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেছেন- ব্লগার বলে তাদের ঠিকানা হয়েছে কারাগারে। এইভাবে তিনি রাজত্ব করতে চেয়েছেন নিজের গদিকে রক্ষা করার জন্য। তিনি যখন দেখেছেন এভাবেও গদি নিশ্চিত হচ্ছে না, তখন তিনি ধরে ধরে হত্যা করেছেন, গুম করেছেন, ক্রসফায়ার দিয়েছেন। যার চরম প্রকাশ পেয়েছে গত জুলাই-আগস্ট মাসে। ক্ষমতা ধরে রাখতে ছাত্র-জনতার ওপর তিনি গণহত্যা চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, এক অদ্ভূত পার্লামেন্ট ছিল। একদিকে আওয়ামী লীগ সরকারি দল, অন্যদিকে তাদেরই অনুগত অন্যদেরকে বিরোধী দল বানাতো। কোথায় নির্বাচন, কোথায় জনগণের সমর্থন, কোথায় জনগণের ইচ্ছা? যে জনগণ হচ্ছে দেশের মালিক, যে জনগণ নির্ধারণ করবে- কে হবে তাদের শাসক; জনগণের এই অধিকারকে হরণ করা হয়েছিল।
আওয়ামী ফেরাউনদের আর বাংলাদেশে স্থান হবে না বলে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা যদি মনে করে আবার সেই যুগ আসবে, আবার জনগণের টাকা হরিলুট করা হবে, আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে, আর ওই ভর্তুকির টাকা চলে যাবে শেখ হাসিনা ও শেখ পরিবারের যারা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছেন তাদের পকেটে এবং সেই টাকা দিয়ে তারা বিদেশে আরাম আয়েশে বসবাস করবে- এই নমরুদের রাজত্ব আর বাংলাদেশে হবে না। আওয়ামী ফেরাউনদের আর বাংলাদেশে স্থান হবে না। তাদের ওই হরিলুটের রাজত্ব আবার কায়েম করার স্বপ্ন আর কখনো পূরণ হবে না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উপদেষ্টা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, সংগঠনের আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ নেতারা।