অনলাইন ডেস্ক – নাগরিক সেবা নিশ্চিতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগে একটি করে মনিটরিং ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ তৈরিসহ আরও কিছু বিধান যুক্ত করে বাংলাদেশ সচিবালয় নির্দেশিকা-২০১৪ এর কিছু ধারা সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার।
আজ রোববার (২ জুন) প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
সচিবালয় নির্দেশিকা সচিবালয়ের বাইরে সব দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে অনুসরণ করা হয়। এ নির্দেশিকার নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন নাম হিসেবে ‘সচিবালয় ও সরকারি অফিস কার্যনির্দেশিকা’ অথবা ‘প্রশাসনিক তথা দাপ্তরিক নির্দেশিকা’ প্রস্তাব করা হয়েছে।
সচিবালয় নির্দেশিকা-২০১৪ তে শাখা পরিদর্শনের বিষয়ে বলা থাকলেও তার কোনো প্রমিত নমুনা নেই। নতুন করে সচিবালয় নির্দেশিকায় এ নমুনা সংযোজন করা হচ্ছে। এজন্য সচিবালয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগে একটি করে মনিটরিং ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ থাকবে। এ অনুবিভাগের কাজ হলো মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলো বিধিবিধান ও নিয়মকানুন মেনে যথাযথভাবে কাজ করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। কেউ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করছে কিনা তা দেখভাল করা। এ বিধির আলোকে কোনো মতামত পাওয়া গেলে তা সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক নোটিং, ই-ফাইলিং ও ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত নোটিশ, সার্কুলার ও চিঠির কপি সাধারণ ডাকের পাশাপাশি ই-মেইলে পাঠাতে হবে। প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিন্ন ডোমেইন যুক্ত ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থাকবে। এ অনুবিভাগ সব বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিবকে ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক রিপোর্ট দেবে। পাশাপাশি এ অনুবিভাগ গোপনে অভিযোগ গ্রহণ ও অনুসন্ধান করতে পারবে।
মনিটরিং ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ একজন যুগ্মসচিব অথবা উপ-সচিবের নেতৃত্বে কার্যক্রম চলবে। সংশোধিত নির্দেশিকায় নাগরিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সচিবালয় নির্দেশিকা সব ক্ষেত্রে অনুসরণ নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুরোনো নির্দেশিকায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপের কোনো বিশেষ নমুনা ছিল না। ফলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপ নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপের প্রমিত একটি নমুনা এ নির্দেশিকায় সংযোজন করা হচ্ছে।
দাপ্তরিক নেমপ্লেটে আগে শুধু সচিব লেখা থাকতো। এখন থেকে সচিব ও সিনিয়র সচিব লেখা যুক্ত হবে।
এক সময় দাপ্তরিক কাজে ব্যাপকভাবে ফ্যাক্স ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও এখন তা খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। বাংলা বা ইংরেজি ফ্যাক্স বার্তা বাদ যাবে সচিবালয় নির্দেশিকা থেকে।
এখন থেকে দাপ্তরিক কাজে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সাটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও অফিস সহায়কদের ছুটি দিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তার সুপারিশ নেওয়া হবে। অফিস সহায়কদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন বা এসিআরের আওতায় আনা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে নতুন এসিআর ফরম তৈরি করে তা সচিবালয় নির্দেশিকায় সংযোজন করা হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের জন্য বাসায় কাজের সুবিধা থাকলেও কর্মচারী অর্থাৎ স্টেনোটাইপিস্ট, অফিস সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সেই সুবিধা নেই। সেক্ষেত্রে তারাও যেন বাসায় বসে দাপ্তরিক কাজ করতে পারেন এজন্য তাদের ল্যাপটপসহ যাবতীয় সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সচিবালয় নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে সংশোধিত নির্দেশিকায় আনা এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সভায় সংশ্লিষ্ট সচিবদের যথাসময়ে উপস্থিত হতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বৈঠকে অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তৈরি প্রস্তাবগুলো পাঠানো হয়েছে।
প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির ১৩তম এ সভায় ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে নাম-পদ সৃজন এবং নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।