আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরাইলি জিম্মি শিরি বিবাসের পরিবার নিশ্চিত করেছে যে, শুক্রবার হামাস শিরি বিবাসের নামে যে মরদেহ সম্বলিত কফিন হস্তান্তর করেছে, সেটা তারই।
শনিবার এক বিবৃতিতে পরিবারটি বলেছে, ‘আমাদের শিরিকে বন্দিদশায় হত্যা করা হয়েছে। এখন সে নিজ ঘরে ফিরে এসেছে’।
বিবাসের পরিবার বলেছে, ‘১৬ মাস ধরে আমরা নিশ্চয়তা খুঁজছিলাম। এখন সেটা পেলেও এতে কোনো স্বস্তি নেই। তবে আমরা আশা করছি, এটি আমাদের কিছুটা (যুদ্ধ) সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাবে’।
এদিকে শিরি বিবাসের দেহাবশেষ ফেরতের বিষয়টি ইসরাইলি ফরেনসিক ইনস্টিটিউটও নিশ্চিত করেছে।
দেশটির জাতীয় ফরেনসিক ইনস্টিটিউট শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, শুক্রবার রাতে হামাস কর্তৃক হস্তান্তরিত একটি দেহাবশেষ শিরি বিবাসের বলে চিহ্নিত হয়েছে।
ইসরাইলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট ও চ্যানেল ১২ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার হামাস চারজন ইসরাইলি বন্দির মরদেহ হস্তান্তর করে। তাদের মধ্যে ছিলেন- শিরি বিবাস, তার দুই শিশু সন্তান কফির ও অ্যারিয়েল এবং ৮৩ বছরের ওডেড লিফশিটজ।
তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার দাবি করেন, হামাস গাজা থেকে বিবাসের পরিবর্তে অন্য এক নারীর দেহাবশেষ ফেরত দিয়েছে।
জবাবে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরাইলি বোমাবর্ষণের ফলে দেহাবশেষ দেখে এ রকম বিভ্রান্তি বা ভুল হতে পারে।
হামাস জানায়, শিরি ও তার দুই সন্তান কফির ও অ্যারিয়েলকে ইসরাইলি বিমান হামলায় হত্যা করা হয়েছে।
তবে ইসরাইল হামাসের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি দাবি করেছেন, ফরেনসিক প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, কফির ও অ্যারিয়েলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই প্রমাণ বিশ্বের বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। যাতে তারা এটি যাচাই করতে পারে’।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের কোনো ফরেনসিক প্রমাণ খুঁজে পায়নি।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও বন্দিমুক্তি
১৯ জানুয়ারি থেকে ৪২ দিনের জন্য প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। এ দফার আওতায়
হামাস ৩৩ জন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইল ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
এর মধ্যে শনিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ৭ম ধাপে হামাস আরও পাঁচজন জীবিত বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। যার বিনিময়ে ইসরাইল ৬০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
শনিবার মুক্তি পাওয়া ইসরাইলিদের মধ্যে রয়েছেন- এলিয়া কোহেন (২৭), ওমের শেম তোভ (২২), তাল শোহান (৪০), ওমের ওয়েনকার্ট (২৩), ২০১৪ সালে আটক ইথিওপিয়ান-ইসরাইলি আভেরা মেঙ্গিৎসু।
তবে ২০১৫ সালে আটক বেদুইন-আরব ইসরাইলি হিশাম আল-সাইদকে পরে মুক্তি দেওয়া হবে।
এছাড়া পরবর্তী ধাপে হামাস আরও জীবিত বন্দিদের মুক্তি দেবে এবং নিহতদের দেহাবশেষ ফেরত পাঠাবে। বিনিময়ে ইসরাইল আরও কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও সংঘাতের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২০০ জন ইসরাইলি নিহত হন। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। সেই সঙ্গে ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইল গাজায় ব্যাপকভাবে সামরিক অভিযান চালায়, যাতে এখন পর্যন্ত ৪৮,৩১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক (হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী)। সেই সঙ্গে গাজার বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সূত্র: বিবিসি ও আনাদোলু