নিউজ ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, অগাস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো আমরা কি সত্যিকার অর্থে মন খুলে কথা বলতে পারছি? ভয়-শঙ্কাহীন, ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? না, হয়নি। তাই এ দুর্ভাগা জাতিকে এখনও অনেক পথ লড়াই করে যেতে হবে।
দৈনিক যুগান্তর আয়োজিত ‘সরকারের এক বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঠিক এক বছর আগে এই অগাস্টেই দেশে কী ঘটছিল, তা আমাদের মনে করা দরকার। যারা জীবন দিয়েছেন, যদি তাদের মৃতদেহ এই কক্ষে রাখা হয়— তাহলে হয়তো লাশের স্তূপ এই কক্ষে ধরবে না। পাঁচশো মানুষের হারানো চোখ যদি এক পাত্রে রাখা হয়, সেই পাত্রটা কত বড় হবে? এসব আমাদের আরেকবার মনে করা দরকার— তাহলে আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য উপলব্ধি করতে পারব।
সামান্তা শারমিন প্রশ্ন তোলেন, আমরা কি কেবল একটা সংসদীয় নির্বাচনের জন্য এতগুলো জীবন দিয়েছি? এতগুলো চোখ, হাত-পা, শরীরের অঙ্গ হারালাম? এটা আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, এই উপলব্ধি থেকেই আমরা দল গঠন করেছি। কিন্তু হতাশ হতে হয় যখন দেখি প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাউকেই মনে হয় না তারা বুঝতে পারছেন— কতজনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তারা আজ ক্ষমতায়। তাদের আচরণ, কথাবার্তা, এমনকি শরীরী ভাষাতেও সেই উপলব্ধির ছাপ নেই।
সমালোচনার সুরে সামান্তা বলেন, এই সরকার যে প্রেক্ষাপটে গঠিত, তা যেন তারা ভুলে গেছেন। কেউ একজনের মাথার খুলি উড়ে গিয়ে সহযোদ্ধার গায়ে পড়েছে— এই নির্মম বাস্তবতা ভুলে গেলে চলবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সচিবেরা সবাই আগের আমলের। অথচ তারা বলছেন, তারা বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে পররাষ্ট্র, অর্থ, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন, তারা কীভাবে ওই পদে এলেন, কার সুপারিশে এলেন— তা জনগণের সামনে উন্মুক্ত করা হোক।
সামান্তা শারমিন বলেন, আমরা এখনো নির্ভয়ে কথা বলতে পারি না। এখনও সুরক্ষা নেই, ন্যায়ের নিশ্চয়তা নেই। যারা এই সরকারের সুবিধাভোগী, তারা যেন ভুলে না যায়— এই সরকার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে। আমাদের সংগ্রাম তাই থেমে থাকছে না— এটা কেবল সরকারের রূপ বদল নয়, একটি সত্যিকারের ন্যায়ভিত্তিক, স্বাধীন, গণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির, বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদিব, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা। উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের প্রধান বার্তা-সম্পাদক আবদুর রহমান, সিটি এডিটর মিজান মালিক, সম্পাদকীয় বিভাগের হাসান শরীফ, সাহিত্য সম্পাদক জুননু রাইন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম।