স্পোর্টস ডেস্ক : নারীদের পায়ের গঠনের কথা মাথায় না রেখেই তৈরি পুরুষ-উপযোগী বুট ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির মুখে পড়ছেন নারী রাগবি খেলোয়াড়েরা।
সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, প্রায় ৮৯ শতাংশ নারী খেলোয়াড় এমন বুট ব্যবহারে ব্যথা অনুভব করেন। এর ফলে শুধু খেলায় অস্বস্তি নয়, চোট পাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইডিএ স্পোর্টস (IDA Sports) গবেষণাটি পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১,০০০ জন নারী খেলোয়াড়ের পায়ের স্ক্যান করে এবং অতিরিক্ত ৩৩০ জন খেলোয়াড়ের ওপর জরিপ চালায়।
এতে উঠে আসে, খেলোয়াড়দের ৭৮ শতাংশের কাছে বুটের আরামই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলেও বাস্তবে প্রায় ৯০ শতাংশই অস্বস্তি অনুভব করেন।
আইডিএ স্পোর্টস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী লরা ইয়াংসন বলেন, বহু বছরের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বুঝেছি, নারীদের জন্য ক্রীড়া জুতার নকশায় এক ধরনের বৈষম্য রয়েছে।
এটি শুধুমাত্র আরামের অভাবই নয়, বরং খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও ফেলছে।
বিশেষ করে পায়ের সামনের দিকে, বড় আঙুলের ওপরে প্রথম মেটাটারসাল হাড়ের নিচে ব্যথা অনুভব করছেন খেলোয়াড়দের ৪৫ শতাংশ। অথচ পুরুষদের বুটে ঐ জায়গাতেই সাধারণত একটি স্টাড থাকে।
নারীরা অনেক সময় নিজেরাই ঐ স্টাডটি ঘষে ছোট করে নেন, যাতে চাপ কম পড়ে।
নারীদের পায়ের গঠন পুরুষদের তুলনায় আলাদা—তাদের পায়ের আর্চ ও হাঁটার ধরণ ভিন্ন। অথচ পুরুষদের জন্য তৈরি একই আকৃতির বুট নারীদের পায়ে পরিয়ে দেওয়া হয়। এতে পায়ের হাড় ও লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ফিফার নারী স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা এবং ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যাট হোয়ালান বলেন, পুরুষ-নারীর গড় ওজনের পার্থক্য প্রায় ১০ কেজি। কিন্তু উভয়কে একই স্টাডের বুট পরানো হলে সেই ট্র্যাকশন কন্ট্রোলের জন্য নারীদের পেশি পর্যাপ্ত নয়। ফলে ভারসাম্য হারানোর ঝুঁকি ও ইনজুরি বাড়ে।
নারীদের জন্য তৈরি মানসম্পন্ন বুট এখনো মূলধারার ক্রীড়া জুতা ব্র্যান্ডগুলোতে পর্যাপ্ত নয়। আইডিএ স্পোর্টস এই ব্যবধান ঘোচাতে কাজ করছে গত সাত বছর ধরে।
তারা আশা করেন, এই গবেষণার ফলাফল সামনে আসায় অন্য ব্র্যান্ডগুলোও নারী ক্রীড়াবিদদের গুরুত্ব দিয়ে ভাববে।
উল্লেখ্য, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইংল্যান্ডে শুরু হচ্ছে নারী রাগবি বিশ্বকাপ। এই প্রতিযোগিতার আগেই বুটজনিত চোট ও অস্বস্তির এমন গবেষণা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে নারী ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে।