1. [email protected] : Masumasian :
  2. [email protected] : Masum Talukdar : Masum Talukdar
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৯ অপরাহ্ন

ফিলিস্তিনের পাশে বাংলাদেশ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট এর সময় : সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১ বার পঠিত হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক – গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ছাত্রজনতার ব্যানারে এসব কর্মসূচি হয়েছে।

আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এসব বিক্ষোভ ও সমাবেশে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। এদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছিল শিশু-নারী-বৃদ্ধরাও।

এর আগে ফিলিস্তিনিদের আহ্বানে বিশ্বব্যাপী ‘নো স্কুল, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের সংহতি ও কর্মসূচি দেখা গেছে।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে সকালে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ (এসএসইউ) বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’, ‘বয়কট ইসরায়েলি পণ্য’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ইসরায়েলি দখলদারদের বিরুদ্ধে একাধিক মিছিল হয়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে নটর ডেম, ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি করেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বেলা গড়াতেই এই সমাবেশ বড় হতে থাকে। এতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ছাত্রজনতা অংশ নেন। এই মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিন’সহ একাধিক স্লোগান দেন।

মিছিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুতুল দাহ করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে একই কর্মসূচি নিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন একদল তরুণ। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে দূতাবাস এলাকায় মিছিল বের করেন তারা। পরে মার্কিন দূতাবাসের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিছিলের সামনে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

অবশ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় সকাল থেকে মার্কিন দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেন সেনাসদস্যরা। তারা এক প্রকার মানবপ্রাচীর তৈরি করেন। সেসময় ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া লোকদের তল্লাশি করা হয়।

সোমবার দুপুরে যোহরের নামাজের পর গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ করেন সাধারণ মুসল্লিরা। এসময় তারা ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’ প্রভৃতি স্লোগানে মুখর করে তোলেন মসজিদের উত্তর পাদদেশ।

মিছিলে ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করেন সর্বস্তরের মানুষ। বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

এদিকে বেলা ৩টার দিকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের মোবাইল ব্যবসায়ীরা।

বৈশ্বিক আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।

বিকেল ৫টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঢাকা মহানগর ইউনিট বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, কেন্দ্রীয় নেতা তাসানুভা জাভিন, লুৎফর রহমান, রফিকুল ইসলাম আইনি, জয়নুল আবেদীন শিশির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিকেল ৪টার দিকে একই কর্মসূচি পালন হয় মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে। সেখানে ‘ইসরায়েল তুই জঙ্গি, আমেরিকা তোর সঙ্গী’ ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘সেভ ফিলিস্তিন’, নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এদিকে বিকেলে রাজধানীতে মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামীও। জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। আর মহাখালীতে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।

ঢাকার পাশাপাশি, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, পটুয়াখালীসহ দেশের প্রায় সব জেলায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও জনতা। এসব কর্মসূচিতে গাজায় অবিলম্বে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয়। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থা ও জোটকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।

কাল মাঠে থাকবে ছাত্রদল, শিবিরের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। অন্যদিকে আগামীকাল দুপুরে কালো পতাকা বেঁধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বাংলাদেশ সরকারের নিন্দা ও প্রতিবাদ
এদিকে রাজপথে জনতার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়, গত মাসে একতরফা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে, যা মানবিক বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করেছে। স্পষ্টতই, ইসরায়েল বারবার আন্তর্জাতিক আবেদনের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়নি এবং এর পরিবর্তে ক্রমবর্ধমানভাবে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর জন্য গাজার ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানায়।

বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব সামরিক অভিযান বন্ধ, সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনের দাবি করছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানাচ্ছে যে, তারা যেন নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা এবং অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব পালন করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনি জনগণের সব ন্যায্য অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুসারে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।

বাংলাদেশ সরকার মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য আলোচনার প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর সহিংসতা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে কূটনীতি এবং সংলাপের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের প্রস্তাব, শান্তি, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের জন্য ফিলিস্তিনিদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে কাজ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশ তার আহ্বানে অবিচল এবং দ্ব্যর্থহীন থাকবে।

দয়া করে পোস্টটি আপনার স্যোসাল মিডিয়া শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2019 LatestNews
Theme Customized BY LatestNews