সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে টানা চারদিনের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সমুদ্রতীরের লাবনী থেকে কলাতলী পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সাগরের নোনাজলে সব বয়সের মানুষ আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছেন, প্রিয়জনদের সাথে কাটাচ্ছেন স্মরণীয় মুহূর্তগুলো।
শুক্রবার সকাল থেকেই সৈকতে ছিল পর্যটকদের ঢল। লক্ষাধিক পর্যটক ছুটির সুযোগে কক্সবাজারে ভিড় জমিয়েছেন। উত্তাল সমুদ্রে স্নান, বালুচরের আনন্দঘন পরিবেশ, আর জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়ে কাটছে তাদের ছুটি।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক মহসি-সুইটি দম্পতি বলেন,অনেকদিন ঘরবন্দি থাকার পর পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কক্সবাজারে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু মানুষের ভিড় এত বেশি যে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছি।
কক্সবাজার সৈকতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সি সেইফ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ ওসমান গনি জানান, দুপুর পর্যন্ত প্রায় অর্ধলাখ পর্যটক ছিল, বিকেলের দিকে ভিড় আরও বেড়েছে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তাদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
পর্যটকের চাপ সামলাতে হোটেল-রিসোর্টগুলোতে বাড়তি সীটের ব্যবস্থা করেছেন অনেক। সমুদ্রস্নান, বিচ বাইকিং, জেট স্কি, প্যারাসেইলিংসহ নানা ধরনের বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। অন্যদিকে, খাবার দোকান, হস্তশিল্পের বাজারসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। পর্যটন ব্যবসায় সুবাতাস পরিলক্ষিত হচ্ছে।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এই ছুটিতে যেন এক বড় উৎসবের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়, রোববার পর্যন্ত ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে বলে জানান হোটেল ব্যবসায়ী আকাশ।
দুর্গাপূজার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়ে চার দিনের ছুটি চলছে। এই লম্বা ছুটিতে অবকাশ যাপনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার ছুটে আসছেন পর্যটকেরা। গতকাল সকাল থেকে পর্যটকেরা শহরের সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করছেন।
আগামী রোববার পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও রির্সোটের কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আজ দুপুরে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে ভরপুর পর্যটক। দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ থাকা সৈকত তীর সেই পুরোনো রূপে ফিরেছে। এ ছাড়া শহরের কলাতলী মোড় থেকে ৮৪ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ছুটছেন পর্যটকেরা। এ সড়কে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ির জাতীয় উদ্যান, ছড়া ও ঝরনা, ইনানী ও পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত, টেকনাফ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসর্গে পর্যটক ভিড় করছেন। আজ থেকে রোববার পর্যন্ত যেসব পর্যটক আসতে চান, তাঁদের অনলাইনে কক্ষ বুকিং দিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তারকা ও মাঝারি মানের সব হোটেল-মোটেলে কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে এবারেই ছুটিতে সর্বোচ্চ পর্যটক এসেছেন বলে জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি আরও বলেন,পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সৈকতের প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।