আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি পাকিস্তানজুড়ে বিরাজ করছে বড় রকমের অস্থিরতা। দেশটির কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা সরকার ঘোষিত লকডাউন এবং পুলিশি প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তাকে মুক্ত করার দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ শুরু করেছে।
এই বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় মুখ বা ‘মধ্যমণি’ হয়ে উঠেছেন বুশরা বিবি। যিনি ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খানের তৃতীয় স্ত্রী হিসেবেই সমধিক পরিচিত।
বুশরা বিবি সম্প্রতি হাজারো পিটিআই সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদে প্রবেশ করেন। তারা সরকারের কঠোর নিরাপত্তা ব্যারিকেড অতিক্রম করে মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ডি-চকে জড়ো হন।
এ সময় একটি ট্রাকের ওপরে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রথমবার ভাষণ দেন বুশরা বিবি। তিনি ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে সেখানেই বসে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
বুশরা বিবি বলেন, আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, খান সাহেব আমাদের মাঝে না আসা পর্যন্ত আপনারা ডি-চক ছাড়বেন না।
ইমরান খানের নির্দেশে ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিবর্তে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় বা রাজধানী এলাকায় বিক্ষোভ প্রতিবাদ করার জন্য বুশরা বিবির জোরাজুরিই মূলত পিটিআই-এর কৌশলে তার বাড়তে থাকা ভূমিকার ইঙ্গিত দেয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তবে সেখানে পুলিশি অভিযানের জেরে বুশরা বিবিকে পালিয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে যেতে হয়। এই প্রদেশটি মূলত পিটিআই-এর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
কে এই বুশরা বিবি?
বুশরা রিয়াজ ওয়াট্টো নামের এই নারী মূলত ইমরান খানকে বিয়ের পরই স্বামীর পদবি গ্রহণ করেন। ইমরান খান এবং তার সমর্থকরাই তাকে ‘বুশরা বিবি’ বা ‘বুশরা বেগম’ নামে ডাকেন। যা মূলত তার সম্মান জানানোর পরিচায়ক।
পাঞ্জাবের এক জমিদার পরিবারের সদস্য বুশরার প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।
২০১৮ সালে গোপনে পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এটি মূলত ইমরান খানের তৃতীয় এবং বুশরার দ্বিতীয় বিয়ে। বুশরা এর আগে প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রথম স্বামীর সঙ্গে সংসার করেন।
তবে ইমরানের সঙ্গে বিয়ের পর তার আগের বিবাহ-বিচ্ছেদের ‘ইদ্দত’-কাল পূরণ না করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। যা চলতি বছরের অক্টোবরে আদালত খারিজ করে দেয়।
বুশরা বিবি সাধারণত নিজেকে ঢিলেঢালা কালো বা সাদা আবায়ায় (বোরখা ধরনের) আবৃত করে এবং মুখ ঢেকে প্রকাশ্যে আসেন। তিনি ফারিদউদ্দিন মাসুদ গঞ্জশাকরের (পীরবাবা ফারিদ) একনিষ্ঠ অনুসারী। যার মাজার তার প্রথম স্বামীর শহর পাকপত্তনে অবস্থিত।
ইমরান খানের সঙ্গে বুশরা বিবির পরিচয়ের সময় বা পরিস্থিতি তেমনভাবে স্পষ্ট নয়। তবে সাবেক সহযোগী আউন চৌধুরীর মতে, ইমরান খান তার (বুশরা বিবি) আধ্যাত্মিকতায় মুগ্ধ ছিলেন।
যদিও ইমরানের বিরোধীরা এই বলে অভিযোগ করেন যে, তিনি জাদুবিদ্যায় পারদর্শী। তবে ইমরান খানের সহযোগীরা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
বুশরা বিবির উত্থান
পাকিস্তানের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। দেশটির নারীরা অতীতে রাজনৈতিক বন্দি প্রিয়জনদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
যেমন- পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। তিনি তার পিতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে সামরিক সরকারের হাতে গ্রেফতার এবং মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত হওয়ার পর সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ করেছিলেন।
ঠিক তেমনিভাবেই কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও বুশরা বিবি এখন পিটিআই-এর একজন কার্যত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাজহার আব্বাসের মতে, রাজনীতিতে বুশরা বিবির অবস্থান আলাদা এবং সরকারও তাকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
পিটিআই-এর মুখপাত্র জুলফিকার বুখারির মতে, বুশরা বিবি এখনও তার ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা চান। যদি তিনি প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, তবে তা ইমরান খানের আদেশেই দিয়েছেন এবং জনগণ অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দেবে এবং একত্রিত হবে। কারণ তিনি পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমরান খানের কারাবাস চলাকালীন বুশরা বিবি পাকিস্তানে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে থাকতে পারেন।
এ বিষয়ে উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, বুশরা বিবিকে এই বিক্ষোভের সামনের সারিতে রাখা মূলত পিটিআইর একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। কারণ তার স্বামী। ইমরান খানের সঙ্গে তার সম্পর্কই তাকে পিটিআইর আন্দোলনে ন্যায়সঙ্গত অবস্থান দিয়েছে।
(রয়টার্স ও এনডিটিভি অবলম্বনে)