আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিম তীরে আরও ২২টি নতুন ইহুদি বসতি গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী ও চরমপন্থি নেতা বেজালেল স্মোটরিচ বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেন।
সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এলো, যখন ইউরোপের একাধিক দেশ পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ না হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। খবর রয়টার্সের।
স্মোটরিচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, নতুন এই বসতিগুলো হবে উত্তর পশ্চিম তীরে। যদিও সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানাননি তিনি।
তা সত্ত্বেও ইসরাইলের কট্টরপন্থি ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধান ইসরাইল গাঞ্জ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট বার্তা দেয় যে—আমরা শুধু থেকে যেতে চাই না, বরং এখানেই ইসরাইল রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী করতে চাই’।
ইসরাইলি গণমাধ্যমের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, এই বসতিগুলোর মধ্যে কিছু অবৈধ আউটপোস্টকে বৈধ করা হবে। আবার কিছু নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে।
এদিকে পশ্চিমা-সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও গাজা-ভিত্তিক সংগঠন হামাস— দু’পক্ষই দখলদার ইসরাইলের এ সিদ্ধান্তের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ অভিযোগের সুরে বলেন, ‘এটি একটি বিপজ্জনক উসকানি। এই উগ্র কট্টরপন্থি ইসরাইলি সরকার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সব পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করছে’।
তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।
অন্যদিকে হামাস নেতা সামি আবু জুহরি ইসরাইলের এহেন সিদ্ধান্তকে ‘নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইসরাইলের এ ঘোষণার জবাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে ইসরাইলের মানবাধিকার সংস্থা বেচেলেম এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছে, তারা ‘ফিলিস্তিনিদের জমি চুরি ও জাতিগত নির্মূলের’ মাধ্যমে ‘ইহুদি আধিপত্য’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
রামাল্লাহর আল মুগাইরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণের পর গম সংগ্রহ করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
একই সঙ্গে সংস্থাটি ইসরাইলের অপরাধকে ‘সক্রিয়ভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার’ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও দায়ী করেছে।
আন্তর্জাতিক চাপ
বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী বাস করেন। অন্যদিকে সেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে জর্ডানের কাছ থেকে ইসরাইল এই অঞ্চলগুলো দখলে করে নেয়। এর মধ্যে পূর্ব জেরুজালেমকে সংযুক্ত করলেও পশ্চিম তীরে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেনি।
দখলদার ইসরাইলের হাতে জাতিগত নিধনের শিকার ফিলিস্তিনিরা অবশ্য পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা অঞ্চলকে একটি ভবিষ্যত স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫৪ হাজার ২০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস তাদের মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এরও বেশি আপডেট করেছে। জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষ মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় ইউরোপের একাধিক দেশ সম্প্রতি গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডা সতর্ক করে বলেছে—যদি ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন বন্ধ না করে এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখে, তাহলে তারা টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
মূলত অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের হার ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। একদিকে ইসরাইলি সামরিক অভিযান, অন্যদিকে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস হামলা—ফিলিস্তিনিদের জীবনে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।