নিউজ ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হলেও এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার ভোর-সকাল-দুপুরে হালকা-মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তাল রয়েছে সৈকত তীর।

বৈরী আবহাওয়ায় অনেকে ঘর থেকে বের হতে না পারলেও সৈকতের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি দেখতে ভিড় জমিয়েছে পর্যটক ও উৎসুক জনতা। অনেকে এ ঢেউয়ের মাঝেই গোসল করতে নেমেছে। তাদের তীরে ফিরাতে লাইফগার্ড কর্মীরা হাঁকডাক অব্যাহত রাখলেও কাউকেই থামানো যাচ্ছে না। শুক্রবার (৩০ মে) দুপুর ও বিকেলে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। বৃহস্পতিবারও একই অবস্থা ছিল সৈকতে।

সরেজমিন দেখা যায়, বৈরী আবহাওয়ার পরও সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টের বেলাভূমিতে ভিড় করেছেন ‘আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা’। নিয়মমতো পর্যটক ও দর্শনার্থী সেবায় থাকা ঘোড়াসহ নানা অনুষজ্ঞ নিয়ে এসেছেন সেবা দেয়া লোকজন। চলাচল করছে বীচ বাইকও। অনেক নারী-পুরুষ গোসলে নেমে ঢেউয়ের সাথে খেলছেন। তাদের নিরাপদে আসতে বার বার তাগাদা দিচ্ছিলেন সী সেইফ লাইফগার্ডের কর্মীরা। তবে, ভারী বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে বন্ধ রয়েছে টং দোকানগুলো। এসব ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে হতাশা বিরাজ করছে।

পরিবার নিয়ে সৈকতে গোসলে নামা পর্যটক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, বেড়াতে চলে এসেছি আর কিন্তু সময়টা পড়ে গেছে দুর্যোগপূর্ণ। এরপরও নির্ধারিত সময়ে ফিরে যেতে হবে। তাই সতর্কতার সাথে পরিবার নিয়ে গোসল সেরে নিচ্ছি, কারণ আবার কবে আসা হবে জানা নেই।

বন্ধুদের নিয়ে সৈকতের দুর্যোগময় পরিস্থিতি দেখতে আসা লিংকরোড় এলাকার জুনাইদ ইকবাল বলেন, নিম্নচাপে সাগর উত্তাল হয় এটা আমাদের জানা। তবে, বৃষ্টিতে সৈকতের আবহ অন্যরকম লাগে। আজ শুক্রবার, চাকরিরত বন্ধুরা ছুটি পেয়ে একসাথে হয়ে সৈকতের অবস্থা দেখতে এসেছি। তবে, এসময় সাগরে নামা সমীচীন নয়।

কলাতলী পয়েন্টের টং দোকানী আমীর হামজা বলেন, আজ চারদিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঠিকমতো দোকান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও দু’টাকা আয়ের আশায় দোকান স্থলে আসি। সাগরের উত্তালতায় অনেকে ভয়ে বিচ এলাকায় আসছেন না। কিন্তু কিছু উৎসাহী লোকজন সৈকতে এসে উত্তাল ঢেউয়ের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখছে। আজকেও খালি হাতে ঘরে ফিরতে হবে।

বিচবাইক চালক আমির উদ্দিন বলেন, নিয়ম মতো সৈকতে এসেছি। লোকজন কিছু থাকলেও কেউ বাইকে চড়ছে না। তেল পুড়লেও এক টাকাও আয় হয়নি এখনো। শূন্য হাতেই ফিরতে হবে হয়তো আজও।

ঝাল মুড়ি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম ও সিদ্ধডিম বিক্রেতা নাজির হোসেন বলেন, পর্যটক থাকলে ভালোই আয় হয়। কিন্তু গত চারদিন পর্যটক নেই বললেই চলে। এরপরও যারা দূর্যোগমূহুর্ত দেখতে আসছেন তারা অল্প-স্বল্প কিনছেন। এতে খরচটা উঠবে, তবে- আয় হবে না।

কিটকট, শামুক-ঝিনুকসহ মৌসুমি পণ্য বিক্রেতারা দোকানপাট বন্ধ করে পরিস্থিতি অবলোকন করছেন। বালু উড়ছে দেখে চটপটি বা অন্য খাবারের দোকানগুলো খোলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী তিন পয়েন্টেই
একই অবস্থা বিরাজ করছে।

সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, সৈকতের সান্নিধ্যে আসা পর্যটক বা দর্শনার্থীদের বিপদাপন্ন হওয়া থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা থাকে আমাদের। দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে সাগরে নামতে নিষেধ করলেও অনেককে মানানো যায় না। যারা গোসলে নামে তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। তবে, নিজের নিরাপত্তা নিজে নেওয়া উত্তম।