রাজধানীর হাতিরঝিলে বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিম (৩৪)। এই ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এর সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত প্লিজেন্ট প্রপার্টিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি।
রোববার (১৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেন তিনি।
বিবৃতিতে রবিউল আলম রবি বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতির পাশাপাশি আমি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বর্তমানে প্লিজেন্ট প্রপার্টিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত।
তিনি বলেন, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সব নিয়মনীতি মেনেই আমি ২০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। এই দীর্ঘ সময়ে কখনোই কোনো আবাসন প্রকল্পে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) আমার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নির্মিত রাজধানীর মহানগর প্রজেক্টে একটি ফ্ল্যাটের অর্ধেকাংশের মালিকানা নিয়ে তানজিল ইসলাম তামিম নামে একজনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বাড়ি নির্মাণের চুক্তির ব্যাখ্যা তুলে ধরে বিএনপির এ নেতা বলেন, ওই জমির মালিক তিনজন। চুক্তি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করে তিন বছর আগেই জমির মালিক ও ক্রেতাদের সব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক জমির মালিক সাড়ে চারটা করে ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা। আর অর্ধেক ফ্ল্যাট কোম্পানির কাছ থেকে কিনে প্রত্যেকে পাঁচটি করে ফ্ল্যাটের মালিকানা ভোগ করবেন। দুজন মালিক অর্ধাংশ ফ্ল্যাট কিনে নিলেও বাকি মালিক খুরশিদা আহমেদ অর্ধাংশ ফ্ল্যাট না কিনেই পাঁচটি ফ্ল্যাট তিন বছর ধরে জবরদখল করে আছেন।
রবিউল আলম রবি বলেন, এ ব্যাপারে কোম্পানি খুরশিদা আহমেদকে অর্ধাংশ ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ বা ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য একাধিকবার তাগাদা দেয়। কিন্তু খুরশিদা আহমেদ কোনোটাই না করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় মহানগর সোসাইটি, পুলিশের ডিবি হেডকোয়ার্টার্স এবং পুলিশের ডিসি তেজগাঁও-এর কার্যালয়ে সালিশ বিচার বসান। আমার কোম্পানির প্রতিনিধিরা সালিশ মীমাংসা মেনে নিলেও খুরশিদা আহমেদ নিজেই তা অমান্য করেন। প্রায় এক মাস আগে খুরশিদা আহমেদের প্রতিনিধি তার স্বামী সুলতান আহমেদ প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের কার্যালয়ে এসে জানান- অর্ধাংশ ফ্ল্যাট না কিনে তারা কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেবেন। এরপরই কোম্পানি ওই অর্ধেক ফ্ল্যাট পাশের ফ্ল্যাট মালিক ফজলুর রহমানের কাছে বিক্রি করতে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু খুরশিদা আহমেদ ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়ে গড়িমসি করতে থাকেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এ সদস্য বলেন, এমন পরিস্থিতিতে গত ১০ অক্টোবর আমার অজ্ঞাতেই কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ দুজন সহকারীসহ ক্রেতা ফজলুর রহমানকে অর্ধেক ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে মহানগর প্রজেক্টে যান। সেখানে ফজলুর রহমান, তার দুই ছেলে এবং তাদের মেয়েজামাইও উপস্থিত ছিলেন। যা পরে আমি জানতে পারি।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সেখানে গিয়ে কোম্পানির কর্মকর্তারা দেখেন খুরশিদা আহমেদের লোকজন দরজা বন্ধ ফ্ল্যাটে ডেকোরেশনের কাজ করছেন। একপর্যায়ে ফ্ল্যাটের অর্ধাংশের ক্রেতা ফজলুর রহমান, তার দুই ছেলে ও মেয়ের জামাই মামুন এবং কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ ও দুই সহকারীর সঙ্গে খুরশিদা আহমেদের দুই ছেলে, স্বামী এবং তাদের ফ্ল্যাটে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
রবিউল আলম বলেন, ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে হাতিরঝিল থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তারা ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিক তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ তানজিল ইসলাম তামিমের সঙ্গেও বেশ কিছু সময় কথা বলেন। তামিম পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। হঠাৎ তামিম অসুস্থ বোধ করলে তাকে স্থানীয় মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, ওইদিন আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। ঘটনার আগেও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তামিমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা এজাহারেও ঘটনাস্থলে আমার উপস্থিতির কথা উল্লেখ নেই।
তামিমের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণে ঘটনাটিকে প্রচারমাধ্যমে ‘দখলদারিত্ব’ হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ঘটনাটি কোনো ‘দখলদারির’ বিষয় ছিল না। দখলদারির ঘটনা হলে জমির তিনজন মালিকের অন্যতম মোজাম্মেল কবিরের নাম এজাহারভুক্ত হতো না।
পুরো বিষয়টিই ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করে রবিউল আলম বলেন, ওইদিনের ঘটনার পেছনে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, দখলদারিত্ব কিংবা আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। প্রচার মাধ্যমে ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল নিছক একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।
তিনি বলেন, তারপরও এ ঘটনার সঙ্গে যেহেতু আমার কোম্পানির নাম জড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী আমি তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। কিন্তু দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা থাকায় এ ঘটনাকে পুঁজি করে বিএনপি সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা দেয়ার সুগভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।