স্পোর্টস ডেস্ক : সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যম্পিয়নশিপের শেষ ম্যাচে নেপালকে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। বসুন্ধরার কিংস আ্যরেনায় গতকাল সোমবার নেপালকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে অনবদ্য অবদান রেখেছেন গোলরক্ষক মিলি আক্তার।
দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবে মিলি জিতেছেন টুর্নামেন্টসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার।
যুব পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক মিলির বাবা একজন কলা বিক্রেতা। একজন কলা বিক্রেতার মেয়ের এমন সাফল্যে আনন্দে মেতেছে তার নিজ এলাকা নান্দাইলের বারইগ্রাম।
মিলির বাড়ি নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশার ইউনিয়নের বারইগ্রামে। মিলির বাবা সামছুল হক একজন কলা বিক্রেতা।
গতকাল সোমবার যখন ম্যাচ চলছিল মিলির খেলা দেখতে টিভির সামনে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মিলি যখনই বল তালুবন্দি করে তখনই তার নাম ধরে বলে চিৎকার করেন বোকাবাক্সের দর্শকেরা।
মিলির বাবা সামছুল যেখানে বসে কলা বিক্রি করেন সেই চৌরাস্তার এলাকায় ভিড় জমেছিল। অন্যদিকে মিলির কেনা এলইডি টিভিতে তার মা, ভাইবোন,আত্মীয়স্বজন সবাই একত্রে খেলা উপভোগ করেন।
খেলা শেষে মিলি যখন সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার নেন তখন আনন্দে অনেকেই পটকা ফোটায়। মিষ্টিমুখ করে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মিলির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন একত্রিত হয়ে মিলিকে নিয়ে আলোচনা করছেন। ভালোমন্দ রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিলির মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি তো বুঝতে পারছি না মিলি কিভাবে এত গোল ফিরাল।
একটা গোলও খাইল না। এতে আমার বুকটা ভইর্যা গেছে। এরপর যহন দেখলাম তার হাতে পুরস্কারটা তহন আনন্দে কাইন্দ্যা দিছি।’
মিলি ফুটবল খেলত বলে অনেক কথা সহ্য করতে হয়েছে জানিয়ে বাবা সামছুল বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় বল খেলতাম, তয় আমার ছেড়ির মতন অতো ভালা খেলতাম না। এই খেলা লইয়া কতজনে যে কত আজে-বাজে কথা কইছে অহন তারার মুহে ছাই দিছি। আমি চাই মিলি দেশের লাইগ্যা আরো সম্মান আনুক। যহন ছেড়িডা জিত্যাইলছে তহনি বেহেরেই মাগনা কলা খাওয়াইছি।’
স্থানীয় সাংবাদিক এনামুল হক বাবুল বলেছেন, ‘অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন আমাদের মিলি। ২১শে পদক পাওয়ার পর এখন আরেকটা সফলতা—এটা নান্দাইলবাসীর জন্য অনেক গর্বের। এটা এলাকার ও নান্দাইলের জন্য বড় পাওনা। একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।’ ভীষণ খুশি হয়েছেন মিলির শৈশবের কোচ মো. দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল। তিনি বলেছেন, ‘আমি যে কী খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’
গ্রামে ফিরলে মিলিকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মিলি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক ছাড়াও সেরা হয়েছে, তা অনেক বড় পাওনা। দেশের ইতিহাসে নান্দাইলের মিলিও ইতিহাস হয়ে থাকবে। মিলি এলাকায় এলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন নান্দাইলেরই শেরপুর গ্রামের আরেক খেলোয়াড় শিখা আক্তার। বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে ২ গোলও করেছেন তিনি।