নিউজ ডেস্ক : ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) অফিস খোলার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
দলটি বলছে, জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির দৃশ্যত উন্নতি হচ্ছে। তাই ঢাকায় ওএইচসিএইচআরের অফিস খোলার প্রয়োজন নেই। জাতিসংঘের উচিত হলো ফিলিস্তিনের গাজায়, দক্ষিণ এশিয়ার কাশ্মীর ও আরাকানে মানবাধিকার অফিস খোলা। কারণ সেখানে মুসলমানরা ভয়াবহ জাতিগত নিধনের শিকার হচ্ছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে নতুন দল জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ এ আহ্বান জানায়।
এ সময় দলটি ঘোষণা দেয়, তৃতীয় বৃহৎ মুসলিম জনবহুল রাষ্ট্র বাংলাদেশের আইন ও জাতীয় সংস্কৃতি অবমাননা করে জাতিসংঘকে সমকামী দূত নিয়োগ করতে দেওয়া হবে না। এ সিদ্ধান্তকে জাতিসংঘের বেআইনি হস্তক্ষেপ ও ইসলাম বিদ্বেষ আখ্যা দিয়ে সর্বাত্মক প্রতিবাদ জানানো হবে বলেও বিক্ষোভ থেকে জানানো হয়।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পরপরই জাতীয় পরিষদের নেতাকর্মী ও মুসল্লিরা উত্তর গেটে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও আরাকানের স্বাধীনতার দাবি জানান। এই তিন জনপদের মুসলমানদের রক্ষায় জাতিসংঘের নিস্ক্রিয়তার নিন্দা জানিয়ে মুহূর্মুহু স্লোগান দেন।
পরে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ফজলুর রহমান সঞ্চালনায় ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়্যেদ কুুতুব, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র আবদুল হামিদ আস সাফওয়ান।
বক্তৃতায় মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী মুসলিম গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আক্রান্ত জনপদে মানবাধিকার কমিশনের অফিস খুলছে না। কিন্তু ঢাকায় অফিস খোলার তোড়জোড় করছে। আমাদের স্পষ্ট কথা, বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন অফিস চাই না। এ অফিস গাজা, কাশ্মীর ও আরাকানে খোলার দাবি করছি।
এ সময় বাংলাদেশে জাতিসংঘের পরবর্তী আবাসিক সমন্বয়ক হিসেবে রিচার্ড এস হাওয়ার্ডকে নিয়োগের কঠোর সমালোচনা করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের এ নেতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনে সমকামিতা নিষিদ্ধ এবং অপরাধ। জাতিসংঘের নতুন দূত আইনের চোখে একজন অপরাধী। তাই তার নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
সাইয়েদ কুতুব বলেন, ইসরাইল বিশ্বমানবতার কলঙ্ক ও আধুনিক পৃথিবীর গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড। হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের থেকে ছয় গুণ শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে গাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে কিন্তু বিশ্বমানবতা নিরব রয়েছে।
তিনি বলেন, ইসরাইলকে গণহত্যা চালাতে অস্ত্র দিয়ে সরাসরি সহায়তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপ। যাদের সহযোগিতা নিয়ে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে তাদেরকে এই গণহত্যার দায় নিতে হবে।
আবদুল ওয়াহেদ বলেন, সর্বদা ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা ইরানের উপর হামলা চালিয়ে পরাজিত হয়েছে কলোনিয়াল অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল ও তার মনিব আমেরিকা। ইরানের উপর হামলা চালিয়ে তারা বিশ্ব মুসলিমের চোখ ফিলিস্তিন থেকে ফিরিয়ে ইরানের দিকে নিয়ে ক্রমাগত ফিলিস্তিনের মুসলামানদের নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। সকল মুসলিম রাষ্ট্র মিলে ফিলিস্তিনের মুসলমান ভাই-বোনদের উপর হত্যাযজ্ঞ শুধু দেখেই যাচ্ছে, বিবৃতি ছাড়া কিছুই করছে না। খোদ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট যাকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা মনে করে বাংলাদেশের লোকজন, সেই লোকটাই ইসরাইলের সাথে প্রকাশ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও ফিলিস্তিনে হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
আব্দুল হামিদ আস সাফওয়ান বলেন, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও আরাকানের মুসলমানদের উপর গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের উপর হামলা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের জনগণ চুপচাপ বসে থাকবে না। আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, গাজার চলমান গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নিন।