নিউজ ডেস্ক : কুমিল্লার তিতাসে গোমতী নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুইদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গোমতীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় জনপদে। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে নাজুক পরিস্থিতির আশঙ্কা করা করছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুমুর থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বিবির বাজার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। গোমতী নদী তিতাস উপজেলার মানিকনগর গ্রাম দিয়ে ১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে লালপুর হয়ে দাউদকান্দির অংশ দিয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রতি বছরই গোমতীর ভাঙন দেখা যায়। ভাঙনে বিলীন হয় বসতভিটা ও ফসলি জমি। বাস্তুচ্যুত হয় বহু মানুষ। এবার টানা বৃষ্টি শুরু পর নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙন থেকে নিস্তার চায় এলাকাবাসী। এজন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এরই মধ্যে মানিকনগর, ঘোষকান্দি, দাসকান্দি, জগতপুর, আসমানিয়া বাজার, দক্ষিণ নারান্দিয়া এলাকায় গিয়ে নদী ভাঙন দেখা গেছে। এসব এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ নারান্দিয়ায় নদীর দুই পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে আসমানিয়া বাজারের অনেক দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আরও বেশ কিছু দোকান ও বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, ‘আমাদের চার কানি বাড়ি ছিল, যা গোমতী নদীর ভাঙনে কয়েক শতকে এসে ঠেকেছে। এইটুকু যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের থাকার জায়গা থাকবে না। প্রতি বছর শুনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালুর বস্তা ফেলবে, কিন্তু বস্তা আর ফেলা হয় না। আমাদের দুঃখ কেউ শোনে না।’
ঘোষকান্দি গ্রামের কাইয়ুম মিয়া জানান, এখন গোমতী যে স্থানে আছে, তার মাঝখানে আমাদের বাড়ি ছিল। দাদার বাড়ি ভেঙেছে, বাবার বাড়ি ভেঙেছে, এখন আমাদের বাড়িও ভাঙনের হুমকিতে। বহু বছর ধরে নদী ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলে ব্যবস্থা নিলে অন্তত বসতভিটা রক্ষা পেত।
আসমানিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, প্রতিবছর বর্ষা এলেই ভাঙন দেখা দেয়। বাজারের অনেক অংশ ভেঙে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে আরও অনেক বাড়ি ও দোকান। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নারান্দিয়া ইউপি সদস্য ছবির আহমেদের ভাষ্য, প্রতি বছর বর্ষার সময়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। গত দুই বছরে প্রায় ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ বছরও যে অবস্থা, তাতে আরও অনেক পরিবার গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো আশা দেখছি না। এভাবে চললে নারান্দিয়ার দুটি গ্রাম গোমতী নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান জানান, পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, জরুরি প্রয়োজনে যা বরাদ্দ পাচ্ছি তা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এ কারণে এখানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আলাদা একটি প্রকল্প নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলতে হবে। নদীর তীর রক্ষার জন্য আলাদা প্রকল্প দরকার। তিনি আশা করছেন এ ধরনের একটি প্রকল্প এখানে নেওয়া হবে।