টাকায় কিনা হয়-এই প্রবাদবাক্যের বাস্তব উদাহরণ পিরোজপুরের মহিউদ্দিন মহারাজ। গত দেড় দশকে তাঁর আর্থিক উত্থান রূপকথাকেও হার মানায়। টাকা দিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ, প্রশাসন সবাইকে বাগিয়ে প্রথমে হন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পরে সংসদ সদস্য। তাঁর বিপুল সম্পদের উৎসের হিসাব মেলাতে হয়রান এলাকাবাসী। অবশেষে মহারাজ পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব করেছেন গোয়েন্দারা।
বিএনপির ছাত্র সংগঠনে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১-১১ এর আগে কখনোই আওয়ামী লীগে ছিলেন না। ২০০৯ সালে নৌকার যাত্রী হয়ে পৌছে যান অর্থবিত্তের উচ্চ শিখরে।
দীর্ঘদিন যার সহকারী ছিলেন, সেই আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে টপকে গত জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বনে যান পিরোজপুর-২ আসনের এমপি। এর আগে ২০১৬ সালে টাকার জোড়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও হন তিনি। ছোট ভাই মিরাজুল ইসলামকে বসান ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে।
টাকার বিনিময়ে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এপিএস থাকাকালে ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকে তাঁর আর্থিক অবস্থা। মহারাজ-মিরাজের নামে-বেনামে মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাউখালি ও পিরোজপুর সদরে সম্পদের পাহাড়। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এত কম সময়ে, এত অর্থের উৎস কী?
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, জনসম্মুখে নিজ বক্তব্যে মহিউদ্দিন মহারাজ বলেছেন, নদীর পানি শেষ হলেও তাঁদের টাকা শেষ হবে না। সবকিছুই তিনি যেন টাকা দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন।
জলবায়ু প্রকল্পের ইকোপার্কের রিসোর্টে মহারাজ পরিবারের বসবাস। তাঁর বিরুদ্ধে নৌপথে ভারতে চোরাচালান, অস্ত্র-কেনাবেচাসহ মাদক কারবারির অভিযোগ রয়েছে। দুবাই-সিঙ্গাপুরে স্বর্ণের কারবার। হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ। রাজনৈতিক ও আর্থিক দাপটে ধামা-চাপা পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি-নির্যাতনসহ সব অনিয়ম।
আরেক স্থানীয় বলছেন, মহিউদ্দিন মহারাজ নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে বিশাল বহর তৈরি করেছেন। যার কারণে একাধিপত্য তৈরি হয়েছে। ফলে এলাকায় তাঁর কাজের বিরুদ্ধে কারো কোনো কিছু বলার সাহস বা উপায় ছিল না।
স্ত্রী-সন্তানসহ মহিউদ্দিন মহারাজের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ী ব্যাংক হিসাবের সব তথ্য তলব করেছে আথির্ক গোয়েন্দা সংস্থা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম বলেন, ‘মহিউদ্দিন মহারাজের সম্পদের বিষয়ে কোনো মামলা বা অনুসন্ধান কিছুই হলো না। এ ক্ষেত্রে দুদক গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে পদক্ষেপ নিতে পারত। দুদকের ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি। আবার রাজনৈতিক যে দল থেকে তিনি এমপি হয়েছিলেন তারা কীভাবে এ ধরনের একজনকে এমপি বানালেন বা মনোনয়ন দিলেন তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।’
৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া মহারাজ ও মিরাজের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।