আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৭ বছর বয়সি পাকিস্তানি টিকটকার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সানা ইউসুফ-কে ইসলামাবাদে নিজ বাসাতেই গুলি করে হত্যা করেছে এক তরুণ। পরে বহুকষ্টে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পাকিস্তানের পুলিশ।
হত্যা করার কারণ হিসেবে ওই তরুণ পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রেমের প্রস্তাবে তাকে বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এমনটাই জানিয়েছে ইসলামাবাদ পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের সময় সানা তার মা ও খালার সামনেই ছিলেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের নাম উমর হায়াত (২২)। তিনি ফয়সালাবাদ থেকে ইসলামাবাদে এসে জোরপূর্বক সানার বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাকে গুলি করে তাকে হত্যা করেন।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সানা ইউসুফের ১৭তম জন্মদিন ছিল গত ২৯ মে। তার ঠিক চার দিন পর গত ২ জুন বিকাল ৫টার দিকে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
এদিকে ঘাতক উমর হায়াত মাত্রই ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাশ করেছেন এবং কোনো আয়বর্ধক পেশায় নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি বিভিন্নভাবে কিশোরী সানার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলেন। তবে সানা তাকে বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসলামাবাদ পুলিশ জানায়, সানা তাকে ফোনে ব্লক করে দিয়েছিলেন। পরে তাকে নিজের বাড়িতে ঢুকতেও বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হায়াত জোরপূর্বক সানাদের বাড়িতে ঢুকে খুব কাছ থেকে দুটি গুলি করেন সানার বুকে। তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও সানাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ইসলামাবাদ পুলিশের আইজি সৈয়দ আলী নাসির রিজভী বলেন, ‘এটি একটি চ্যালেঞ্জিং তদন্ত ছিল। কারণ হত্যাকাণ্ড ছিল ব্লাইন্ড—কোনো স্পষ্ট সূত্র ছিল না’।
তিনি জানান, পুলিশ সন্দেহভাজনের খোঁজে ১৩টি অভিযান চালায়। যার মধ্যে ৩টি ইসলামাবাদে এবং ৮টি অন্যান্য শহরে চালানো হয়। অবশেষে উমর হায়াতকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে সানার ফোন ও হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
প্রথমদিকে গুজব ছড়ায় যে, এটি ঘরোয়া পারিবারিক সম্মানহানির হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তবে আইজি নাসির রিজভী স্পষ্টভাবে বলেন, ‘এটি আত্মীয় বা অতিথির কাজ নয়। প্রথমে এভাবে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হয়েছিল’।
সামাজিক বার্তা:
কিশোর বয়সেই জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে ওঠা সানা ইউসুফের মৃত্যু কেবল একটি প্রাণহানির ঘটনাই নয়—এটি একটি সামাজিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
এই বর্বর হত্যাকাণ্ড আবারও সমাজে নারীর নিরাপত্তা, প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে না পারার সামাজিক প্রবণতা এবং ডিজিটাল জগতে নারীদের হয়রানির ভয়াবহতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
একটি কিশোরীর ‘না’ মানে ‘না’—এটিকে সম্মান না করা এবং সেই ‘না’-কে জীবননাশের অজুহাত বানানো এক নির্মম সহিংসতা।
এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচার সুষ্ঠু ও দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হবে—এমনটি প্রত্যাশা পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। সূত্র: জিও নিউজ