অনলাইন ডেস্ক : ড.মুহম্মদ ইউনূসের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণাকালে ৪ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে জিএমপি‘র গাছা থানা পুলিশ।
শুক্রবার রাতে নগরীর গাছা থানাধীন ৩৪ নং ওয়ার্ডস্থ ওঝার পাড় এলাকা থেকে প্রতারক চক্রদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতারক চক্ররা সুকৌশলে অসহায় দিনমজুরদের টার্গেট করে জনপ্রতি তিন লক্ষ টাকা সুদ মুক্ত ঋণ দিবেন। এমন লোভনীয় প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর নাম ব্যবহার করেছেন।
অহিংস গণঅভ্যুথান বাংলাদেশ এর উদ্যোগে “লুণ্ঠিত উদ্ধার করবো, বিনা সুদে পুঁজি নেব”শ্লোগান প্রচার করে ঋণ দেওয়ার নামে নতুন করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে প্রতারক চক্রটি। ঋণ নিতে আগ্রহীগণকে আগামী ২৫নভেম্বর ঢাকার শাহবাগে সম্মেলনে উপস্থিত হতে হবে। ঋণের আবেদন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য নিয়েছে তিনশত থেকে চারশত টাকা। ঋণ প্রত্যাশি ও সম্মেলনে উপস্থিতির ডেলিগেট টিকেট স্বরুপ টোকেন। টোকেনধারী সবাইকে দেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরর পক্ষ থেকে তিন লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ।
এই সুদমুক্ত ঋণ প্রদানে গাজীপুর জেলায় সমন্বয়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পেয়েছেন নগরীর ওঝারপাড় এলাকার আব্দুল মতিন ব্যাপারী ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মধু (৫৫)। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত আরো চারজনরে মধ্যে তিন’জনকে গ্রেপ্তার করে গাছা থানা পুলিশ। গ্রেফতার কৃতরা হলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পুকিবাজিত এলাকার পিতা-আব্দুল হালিমের পুত্র মোঃ জাফর (৪০) জামালপুরের মেলান্দহ থানার কুলিয়া গ্রামের মৃত দুলাল মিয়ার পুত্র আলাল (৪৫), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সাপখালির মৃত কুরবান আলীর পুত্র রমজান (৪০) সহ তাহাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন। প্রতারকদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় হলেও প্রায় ২যুগ ধরে প্রতারণা করে নগরীর গাছা থানার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। তাদের এই প্রতারণার কৌশলী ফাঁদে পা-দিয়ে সর্বসান্ত হওয়ার পথে যেতে বসেছে প্রায় এক হাজার খেটে খাওয়া শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দা।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের অবগত করেন। স্থানীয়ভাবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে গাছা প্রেসক্লাবের গণমাধ্যম কর্মীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শরীফপুর আশরাফ মার্কেট এলাকায় উপস্থিত হয়ে প্রতারকদের হাতে নাতে ধরে ফেলেন সংবাদকর্মীগণ। প্রতারক চক্রের কাছে সংবাদকর্মীগণ লোন নিতে আগ্রহী হয়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতারকগণ সংবাদকর্মীদের কাছে উক্ত হারে টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে গাছা থানায় সংবাদ দিলে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন খান সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স উপস্থিত হয়ে তল্লাশী করে টাকা গ্রহণের নামের তালিকা ও কয়েকটি ভূয়া টিকিট বই জব্দসহ তাকে আটক করে রাত দশটায় পুলিশ হেফাজতে নেয়।
প্রতারকদের থানায় নিয়ে আসার পর থেকে শুরু হয় বিভিন্ন নেতা কর্মীদের তদবির। এতে সুযোগ পেয়ে বসেন গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আলী মোহাম্মদ রাশেদ। অবশেষে রাত একটার পর ভোক্তভোগী মন্টু মিয়ার অভিযোগ গ্রহন করতে বাধ্য হন। চলে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত দেন দরবার। অবশেষে শনিবার দুপুরের পর মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন। বিশিষ্টজনরা মনে করেন, দেশর সরকার প্রধানের নামে এমন ভয়াবহ প্রতারণা রাষ্ট্র দ্রোহিতার সামিল। উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় ভয়াবহ রুপ নিয়েছে প্রতারণা। প্রতারকরা ছাড়া পেয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন মামলা এজহার ভূক্ত করার সময় কম ও দুর্বল আইনে মামলা রজু করে আদালতে প্রেরণ করা।
অভিযোগ ও প্রতারকদের বক্তব্য থেকে জানায় যায়, প্রতারকরা রাষ্ট্র প্রধানের নামে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্নসাত করলেও এফআইআরে রাষ্ট্র প্রধানের নামে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। সেখানে ৪০৬ ও ৪২০ বিশ্বাস ভঙ্গের মতো ধারা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্র প্রধানের নামে ভয়াবহ প্রতারণা করার পরেও ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলার বিষয়ে গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, উপযুক্ত ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
প্রতারক মধু বলেন, টাকার বিপরীতে লোন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য টিকেট দিয়েছেন। ওই টিকেট নিয়ে নির্দিষ্ট বাসযোগে ঢাকার সম্মেলনে যাবেন ঋণ প্রত্যাশিরা। সেখানে সম্মেলনের লগোযুক্ত একটি করে টি-শার্ট দেয়া হবে। একই সময় ঋণ প্রত্যাশিদের চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। জনপ্রতি পেয়ে যাবেন ৩ লাখ থেকে কোটি টাকা ঋণ। মাসিক তিন হাজার টাকা হারে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের সুযোগ পাবেন প্রত্যেক ঋণ গ্রহিতা। কতজনকে দেওয়া হবে ঋণ সে ব্যাপারে মধু বলেন, গাজীপুর থেকে এক হাজার লোককে দেওয়া হবে এই টাকা। এরমধ্যে ৮৫০ জন হয়ে গেছে আর ১৫০জন বাকী আছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও ভূক্তভূগী মন্টু, গেসু মিয়া, কাজল, রতন, মতি-সহ অর্ধ্ব-শতাধিক ভূক্তভূগী বলেন ৩০০টাকার বিপরীতে কিছু দেয়নি। ৪শ টাকার বিনীময়ে যারা ঢাকায় গিয়ে সম্মেলনে যোগ দিয়ে উপস্থিতি জানান দিবে তাদের দেয়া হয়েছে বাসের টিকেট, সম্মেলনে গেলে পাবেন একটি করে টি-শার্ট ও ঋণের নিশ্চয়তা। ভূক্তভূগীরা আরো জানান প্রায় ১৫দিন ধরে এসব টাকা তুলে তার বাড়ির অসমাপ্ত কাজ করছে মধু, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষ এ প্রতারকসহ এর সাথে জড়িতদের বিচার চান।