1. [email protected] : Masumasian :
  2. [email protected] : Masum Talukdar : Masum Talukdar
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১০:৫৬ অপরাহ্ন

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া কোথায়?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট এর সময় : বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
  • ০ বার পঠিত হয়েছে
ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়া
ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাত্র এক দশক আগেও বিশ্ব দেখেছিল সিরিয়ায় রাশিয়ার সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ হস্তক্ষেপ। ২০১৫ সালে যখন বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখন সিরিয়ার আকাশে গর্জে উঠেছিল রুশ যুদ্ধবিমান। সেই হস্তক্ষেপ শুধু বাশারকে কিছুদিনের জন্য বাঁচায়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার পুনরুত্থানকেও সামনে নিয়ে এসেছিল।

কিন্তু ২০২৫ সালের দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন।

রাশিয়ার আঞ্চলিক মিত্র ইরান এখন টানা ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু। গত কয়েক দিনে ইসরাইল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও সন্দেহভাজন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তারপরেও ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া ছিল নীরব, এমনকি নিষ্ক্রিয় বলা চলে।

যদিও মস্কো স্বভাবসুলভভাবে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে। তবে তারা কোনো সামরিক সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়নি। সিরিয়ার ক্ষেত্রে যা ছিল ঠিক উল্টো—এবং এটি রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে বড় এক পুনর্মূল্যায়নের ইঙ্গিত।

রাশিয়ার জন্য অতিরিক্ত এক যুদ্ধ?

রাশিয়ার এই সতর্কতার কেন্দ্রে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই সংঘাত তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। আর তাতে রাশিয়ার সামরিক শক্তির বড় অংশই বলা যায় ক্ষয়প্রাপ্ত।

রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ নিকিতা স্মাগিন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘রাশিয়া ইরানকে রক্ষা করতে গেলে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি নিতে হবে। এ অবস্থায় ইরানকে বাঁচানো রাশিয়ার পক্ষে মূল্যসাধ্য নয়’।

অর্থাৎ, রাশিয়ার পক্ষে আরেকটি সামরিক অভিযানের জন্য এখনো প্রয়োজনীয় সামর্থ্য ও ইচ্ছা—দুটোর কোনোটিই নেই।

রাশিয়া আরও সতর্ক— কারণ তাদের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারের মতো উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সম্পর্ক রয়েছে। এই দেশগুলো ইরানের ক্ষমতাবৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে আছে। এ অবস্থায় ইরানের পক্ষে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ তাদের সঙ্গে সেই সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

আরেকটি বড় কারণ হলো- সিরিয়া অভিজ্ঞতা। যদিও শুরুতে রাশিয়া বাশারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই তার পতন ঘটে।

বহু বছরের সামরিক ব্যয়, কূটনৈতিক পরিশ্রম এবং আন্তর্জাতিক চাপ—সবকিছুর পরও শেষমেশ এটি রাশিয়ার জন্য ছিল এক ব্যর্থতা। এ অভিজ্ঞতা এখন ইরান পরিস্থিতি মূল্যায়নে বড় ভূমিকা রাখছে।

তেহরান পতনের সম্ভাব্যতা ও মস্কোর নীরব প্রত্যাশা

এদিকে ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা যদি ভেঙে পড়ে—যা এখন ইসরাইলের স্পষ্ট লক্ষ্য বলেই মনে করা হচ্ছে—তাহলে রাশিয়ার আঞ্চলিক মিত্রজালের আরেকটি স্তম্ভ ধসে যাবে। ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার পর এটি হবে মস্কোর জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা।

তবুও ক্রেমলিনে আতঙ্কের কোনো চিহ্ন নেই। বরং এই সংঘাত যেন তাদের জন্য অন্য এক সুযোগ তৈরি করছে।

মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যস্থতাকারী

সিরিয়া সংকটে রাশিয়া যেখানে সেনাবাহিনী নামিয়েছিল, সেখানে এবার তারা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-ই একমাত্র বৈশ্বিক নেতা যিনি ইরান, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারছেন। এ অবস্থান রাশিয়াকে বড় কূটনৈতিক সুবিধা দিচ্ছে।

সিএনএস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ফোন করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ইরানি পারমাণবিক ইস্যুতে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করে আসছে। আর সেই ভূমিকা আবারও রাখতে তারা প্রস্তুত।

ক্রেমলিনঘনিষ্ঠ একটি থিংক ট্যাংকের প্রধান ফিয়োডর লুকিয়ানোভ ব্লুমবার্গ-কে বলেন, ‘গোপন কূটনীতি চালু হলে রাশিয়া সম্ভবত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপে ভূমিকা রাখবে। তবে ইসরাইলের এ সংলাপে আগ্রহ খুব একটা নেই’।

রুশ প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই ইরান ও ইসরাইলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তেজনা প্রশমন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের জন্য হস্তক্ষেপ ছাড়াই প্রভাব বজায় রাখার এটাই উপযুক্ত পথ।

বিশৃঙ্খলা থেকেই লাভবান রাশিয়া

এই ‘মধ্যস্থতাকারীর’ ভূমিকা রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গেও মিলে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়লে সাধারণত তেলের দাম বাড়ে—এতে লাভবান হয় জ্বালানি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল রাশিয়া।

ক্রেমলিনঘনিষ্ঠ আরেক বিশ্লেষক সের্গেই মার্কভ দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-কে বলেন, ‘তেলের দাম বাড়লে রাশিয়া অতিরিক্ত কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে। এটা সবসময়ই তাদের জন্য উপকারী’।

সামরিকভাবে অনুপস্থিত থেকেও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় রাশিয়া এই বিশৃঙ্খলার মাঝেও প্রভাব ও লাভ দুটোই ধরে রাখতে চাইছে।

পিছু হটা নয়, বরং কৌশল বদল

সের্গেই মার্কভ বলেন, আমরা যা দেখছি, তা রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে যাওয়া নয়—বরং শক্তি ব্যবহারে নতুন কৌশল। আগে যেখানে প্রভাব মানে ছিল সেনা, যুদ্ধবিমান ও ঘাঁটি; আজ তা পাল্টে দাঁড়িয়েছে যোগাযোগ, সংলাপ ও কূটনৈতিক ভারসাম্যে।

রাশিয়া এখন আর ইরানকে পুরোনোভাবে রক্ষা করতে চায় না, বরং নিজেকে তুলে ধরছে ‘অপরিহার্য মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে। তবে এতে ঝুঁকি যে একেবারে নেই- তা কিন্তু না। যদি ইরানে খামেনি সরকারের পতন ঘটে, তাহলে রাশিয়া তার বাকি কয়েকটি আঞ্চলিক মিত্রও হারাবে। আর এটা এমন এক সময়, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া নিজেই চাপে।

তবুও, অন্তত এখনই ক্রেমলিন ধরে নিচ্ছে যে, তারা সামরিকভাবে ঘরে থাকলেও কূটনৈতিকভাবে সামনে থেকে এই সঙ্কটে লাভবান হতে পারবে।

(টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অবলম্বনে)

দয়া করে পোস্টটি আপনার স্যোসাল মিডিয়া শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2019 LatestNews
Theme Customized BY LatestNews