আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে একটি গণকবরে অন্তত এক লাখ মানুষের লাশ রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের আমলে এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্কফোর্স এমনটাই দাবি করছে। মঙ্গলবার আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পর্যবেক্ষক সংস্থাটির প্রধান মৌয়াজ মুস্তাফা গণকবর সম্পর্কে বলেন। তবে পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধানের এমন দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
দামেস্ক থেকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৌয়াজ মুস্তাফা বলেন, রাজধানী দামেস্ক থেকে ২৫ মাইল বা প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে আল কুতায়ফাহ নামের ওই গণকবরের অবস্থান। তিনি জানান, সিরিয়ায় গত কয়েক বছরের তিনি যে পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন, এটা তারই একটি।
তিনি বলেন, এখানে অন্তত এক লাখ মানুষকে পুঁতে ফেলা হয়েছে। খুব রক্ষণশীল হিসাব করলেও সংখ্যাটি এমন হবে। সিরিয়ায় এ পাঁচটি ছাড়াও আরও অনেক গণকবর আছে বলে মনে করেন মুস্তাফা। এসব গণকবরে আসাদের আমলে নির্যাতনের শিকার সিরিয়ার নাগরিক ছাড়াও মার্কিন-ব্রিটিশসহ বিভিন্ন বিদেশি রয়েছে।
মূলত ২০১১ সালে বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমাতে আসাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। সিরিয়ায় সর্বশেষ ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় বাশারের বাহিনীর হাতে কয়েক লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। যদিও বাশার আল আসাদ বরাবর তার সরকারের বিরুদ্ধে আনা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের উগ্রপন্থি হিসাবে চিহ্নিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
বাশার আল আসাদের সরকারের পতন ও তার রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পরপর সিরিয়ায় ছুটে যান মুস্তাফা। আল কুতায়ফাহ গণকবরে দাঁড়িয়ে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। পরে সেখান থেকেই রয়টার্সের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন।
মুস্তাফা জানান, বাশার আল আসাদের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ সামরিক হাসপাতালগুলোয় সংগ্রহ করা হতো। পরে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে সেসব মরদেহ নেওয়া হতো গণকবরে। এই কাজের দায়িত্বভার ছিল সিরিয়ার বিমানবাহিনীর হাতে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলাম, যারা এসব গণকবরে সরাসরি কাজ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তারা হয় নিজেরাই সিরিয়া থেকে পালিয়ে যান, নয়তো আমরা পালাতে সহায়তা করি।’ বাশার আল আসাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রমাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব গণকবর অরক্ষিত পড়ে থাকায় উদ্বেগ জানান মুস্তাফা।
তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে প্রমাণাদি সংরক্ষণের জন্য এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ৮ ডিসেম্বর মাত্র ১২ দিনে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও আরও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিমানে করে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। বাশার আল আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন।
২০০০ সালের বাবার মৃত্যুর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন বাশার আল আসাদ। তিনিও টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। বাশারের বিরুদ্ধে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, রহস্যময় কারাগারে আটকে রেখে নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।