স্পোর্টস ডেস্ক : বিপিএলের ১১তম আসর চলছে। প্রথম আসর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো টুর্নামেন্টই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। এবার ভাবা হয়েছিল বিপিএলে নতুনত্ব আসবে। বিসিবির নতুন নেতৃত্বে টুর্নামেন্টটির নতুন পথচলা শুরু হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিপিএলের পরিকল্পনায় যুক্ত হন। এর আগে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক আয়োজনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। বিসিবিও সবকিছু ঢেলে সাজানোর কথা বলেছে। কিছু নতুনত্ব এলেও বিতর্ক, বিশৃঙ্খলায় এক যুগ পরও বিপিএলে কিছুতেই আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না।
এবার টুর্নামেন্টে শুরুতেই টিকিট নিয়ে ঘটেছে লঙ্কাকাণ্ড। মিরপুর স্টেডিয়ামে ভাঙচুর, টিকিট বুথে আগুন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে। এর আগে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিপিএল কনসার্ট আয়োজনে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
এর মধ্যে বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং বডির সদস্যসচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিদের সঙ্গে বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে আসে। বিসিবির সভাপতি দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন ফাহিম।
বিসিবি থেকে পদত্যাগের ভাবনার কথাও জানান সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিসিবির এই পরিচালক। এই বিতর্ক বিসিবির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার চরম দুর্বলতার চিত্র ফুটে ওঠে। এরপর বিপিএলের সিলেট পর্বে বাউন্ডারি লাইন ছোট করে বিপিএল জমিয়ে তোলার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
সবশেষ বিপিএল চট্টগ্রামে গিয়ে বিতর্ক উগড়ে দিয়েছে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের ইস্যু। পারিশ্রমিক না পাওয়ায় দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা বিদ্রোহ করে বসেন। প্রতিবাদে অনুশীলন বর্জন করেন তারা। দলে যোগ দেননি সব খেলোয়াড়।
খেলোয়াড়দের এই বিদ্রোহ থামাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে উড়ে যান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। ওই দিন রাতে বোর্ড প্রধানের মধ্যস্থতায় ফ্র্যাঞ্চাইজি দুর্বার রাজশাহীর কর্তৃপক্ষ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার একটা সমাধান হয়েছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা শুরু থেকে বিপিএলের চরিত্রে মিশে আছে। পারিশ্রমিক বিতর্কের ঝাঁপি মাথায় নিয়েই এবারের বিপিএল শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী মাঠে নামার আগেই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে।
কিন্তু এই নিয়ম দু-একটি দল ছাড়া কেউই মানেনি। টুর্নামেন্টের শুরুতে পারিশ্রমিকের বিষয় সামনে নিয়ে আসেন রাজশাহীর এক ক্রিকেটার। তখন ফারুক আহমেদ পারিশ্রমিকের বিষয়ে বিসিবির প্রতি আস্থা রাখতে বলেন ক্রিকেটারদের। এতে ভরসা পান খেলোয়াড়েরা।
বিসিবির প্রতি আস্থা রাখার পর টুর্নামেন্ট অর্ধেকে পৌঁছে গেলেও একটি টাকাও পারিশ্রমিক না পেয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন খেলোয়াড়েরা। রাজশাহী দল থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ জানুয়ারি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিদের ২৫ শতাংশ নগদ ও ২৫ শতাংশ চেকের মাধ্যমে প্রদান করবে তারা। তাদের এই অঙ্গীকারেই খেলোয়াড়েরা অনুশীলন ও খেলায় ফিরতে রাজি হন।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আর্থিক অনিয়ম ঠেকাতে ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়ার ব্যবস্থা করে বিসিবি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা দিয়েছে কি না, তা জানেন না স্বয়ং বিপিএল গর্ভনিং বডির সদস্যসচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিমই।
তিনি বলেন, ‘এটা আমাকে দেখে বলতে হবে।’ একসময় বলা হতো, আইপিএলের পরই বিপিএলের অবস্থান। বিপিএলের প্রথম আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা সময় ছিল। কিন্তু এখনো কোনো অবস্থানেই নেই বিপিএল। পিএসএল, বিগব্যাশ, ক্যারিবিয়ান লিগ অনেক এগিয়ে গেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের যে মডেল, আমরা সেটিই ফলো করছি না। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আসতে হলে মডেল ফলো করতে হবে।
সারা পৃথিবীতে একই মডেল। এজন্য লম্বা সময়ের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। তাহলে হয়তো চার-পাঁচ বছর পর একটা পর্যায়ে যাবে বিপিএল।’ আলমগীরের মতে, বিপিএলকে কাক্সিক্ষত জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি।
বারবার বদলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি, দাঁড়ায়নি কোনো ব্র্যান্ড ভ্যালু। আলমগীর মনে করেন, বিপিএলের লক্ষ্যে যেতে না পারার পেছনে দায় আছে বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি দুই তরফেই। বিসিবি শুরুতে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক হিসেবে কাউকে আনতে পারেনি। ফলে পারিশ্রমিক বকেয়াসহ নানান ইস্যুতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আলমগীর বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি যে মডেলে বিশ্বব্যাপী আয়োজিত হচ্ছে, সেই মডেলই ফলো করছে না বাংলাদেশ। ক্রিকেট বোর্ডের ছোট একটি বডি কাজ করছে। বিপিএলের জন্য আলাদা একটি বডি দরকার। তারা সারা বছর ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, বিপিএল সংশ্লিষ্ট সব কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিপিএলকে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে হলে আপনাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলো লাভবান হচ্ছে, সেভাবে লাভবান হচ্ছে না বিপিএল।
গত বোর্ড বিপিএলকে একটা ব্যবসায় পরিণত করেছিল। ব্র্যান্ড হিসেবে দলগুলো দাঁড়াতে পারেনি। আমরা যে চিন্তা করে বিপিএল শুরু করেছিলাম, সে পথে হাঁটেনি বোর্ড। এখন নতুন করে চিন্তা করতে হবে।’