অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজকে কোনো কারণে মুখ থুবড়ে পড়লে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। ’৯০-এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- আমরা এই সরকারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি এবং করব, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। আর এই নির্বাচনটি যত দ্রুত সম্ভব হতে হবে। তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কারণে যদি আজকে মুখ থুবড়ে পড়ে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব ঘটতে পারে। তাই আমরা আশা করব, এ সরকার যে কমিশন করেছেন তার রিপোর্ট পাবার সাথে সাথে পরবর্তী করণীয় হিসেবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ যাদেরকে রায় দিবে তাদের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে এবং দেশ শান্তিপূর্ণভাবে চলবে। পাশাপাশি দেশের যে সকল সমস্যার জট বেঁধে আছে তা সমাধান করবে। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতা এবং দেশের মানুষের যে দাবি তা পূরণ হতে হবে এবং সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বিচার এখনো পাইনি এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে এবং এই বিচার দ্রুত করতে হবে। এতদিন সাগর- রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্ব হওয়ার কারণ একটাই, আওয়ামী লীগ সরকার এখানে জড়িত ছিল। তখন প্রতিবেদন জমা হয়নি, বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু আজকে এই বিচার বিলম্ব হবার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ অনেক বছর আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। যে গণতন্ত্র একবার এনেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আরেকবার এনেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন করে সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি গণতন্ত্র। গণতন্ত্র যেভাবে অর্জিত হয়েছে, তা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সাইফুদ্দিন মনিকে স্মরণ করে তিনি বলেন, সাইফুদ্দিন মনির স্বপ্ন তখনই পূরণ হবে যখন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় আমরা দ্রুত গণতন্ত্র ফিরে পাবো, দ্রুত ভোটাধিকার ফিরে পাব এবং দ্রুত একটি জনগণের সরকার পাব- যেখানে এই দেশের সরকার পরিচালিত হবে জনগণের মাধ্যমে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট যেভাবে দেশে দুঃশাসন চালিয়েছে সেটা আর বলতে চাই না। তারা দেশটাকে জেলখানা বানিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রাস্তায় মিশিয়ে ফেলছে। আওয়ামী লীগের সাথে কোনো আপস হবে না।
তিনি বলেন, যেকোনো আন্দোলনে ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থান একটা অনুপ্রেরণা হিসেবে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার জুলাই-আগস্টে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। তাদের সাথে কোনো আপস হবে না। আমরা প্রয়োজন হলে আবার রাস্তায় নামবো।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও ভালো না । আওয়ামী প্রেতাত্মারা এখনো বিভিন্ন দপ্তরে বসে আছে। অবিলম্বে তাদের সরিয়ে ভালো মানুষ বসাতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যত দ্রুত একটা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, ততোই দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গল। কারণ, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে এই সরকারকে অস্বস্তিতে রাখতে চায়। কিন্তু আমরা এই অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব না।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, অবিলম্বে বিএনপির সকল নেতাকর্মীর নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।
আলোচনা সভার শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা এবং প্রয়াত সাইফুদ্দিন মনির রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের তোফায়েল আহমেদ কায়ছারের সঞ্চালনায় এতে প্রয়াত সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির ছোট ভাই মইনুদ্দিন খালেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।