বিনোদন ডেস্ক : বিশ্ব চলচ্চিত্রে বলিউড ও ভারতের আঞ্চলিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বিশেষত দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অবস্থান বেশ শক্তপোক্ত ও সমাদৃত। হলিউডের পর ভারতের বলিউডকেই বিশ্বের বৃহত্তম সিনে ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ধরা হয়। প্রতিভাবান নির্মাতা, সাহসী গল্প এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট- সব মিলিয়ে ভারতীয় সিনেমা এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
বহু বছর ধরে সিনেমার উপস্থাপন ও বিষয়বস্তুর ওপর কঠোর নজরদারি করে এসেছে ভারতের সিনেমা সেন্সর বোর্ড। যদিও সিনেমা শিল্প মতপ্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তবে যৌনতা, নগ্নতা বা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির চ্যালেঞ্জিং উপস্থাপন অনেক সময় সিনেমাকে সেন্সরের কাঁচির নিচে ফেলেছে। আজকের এই প্রতিবেদন এমন ৭টি সিনেমা নিয়ে, যেগুলো অতিরিক্ত নগ্নতার জন্য রূপালি পর্দায় আলোর মুখ দেখেনি।
আনফ্রিডম (২০১৫)
একসঙ্গে দুটি স্পর্শকাতর বিষয়- সমকামিতা এবং ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে তৈরি এই সিনেমা। সিনেমার একাংশে দুই নারীর মাঝে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য এবং অপর অংশে একজন মুসলিম চরমপন্থী জঙ্গি বন্দীর মানসিক দ্বন্দ্ব দেখানো হয়। বেশ কিছু সহিসংতার দৃশ্য এবং তুমুল নগ্নতা থাকায় এটি ভারতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কখনো মুক্তি পায়নি ভারতে। রাজ অমর মিত্রার পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন প্রীতি গুপ্তা, আদিল হুসেন, ভবানী লি প্রমুখ।
দ্য পেইন্টেড হাউজ (২০১৫)
একজন চিত্রশিল্পী ও তার কিশোরী মডেলের মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্ক এবং যৌন বিকারগ্রস্ততাকে ঘিরে তৈরি মালয়ালম ভাষার এই ছবিটি চরম বিতর্কের জন্ম দেয়। নগ্নতা ও সাহসী দৃশ্যের কারণে সেন্সর বোর্ড ছবিটিকে ‘অশ্লীল’ ঘোষণা করে এবং নিষিদ্ধ করে দেয় ভারতে। স্যঞ্জীব সুরেন্দ্রনের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেন নেহা মহাজন, কালাধরন নাসির ও আকরাম মোহাম্মদ।
গান্ডু (২০১০)
বাংলায় নির্মিত এই স্বাধীনধারার চলচ্চিত্রটি ছিল নগ্নতা, যৌনতা ও গানের অভিনব মিশেল তৈরি। সিনেমাটিতে খোলামেলা যৌন দৃশ্য, হস্তমৈথুন ও আপত্তিকর শব্দ ব্যবহারের কারণে ভারতের সেন্সর বোর্ড এটি সরাসরি মুক্তির অনুমতি দেয়নি। বিদেশে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসা পেলেও ভারতে এটি মূলধারায় কখনোই প্রদর্শিত হয়নি। কৌশিক মুখার্জি (কিউ) পরিচালিত সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন ঋ সেন, অনুব্রত বসু, কমলিকা ব্যানার্জি প্রমুখ।
সিনস (২০০৫)
একজন ক্যাথলিক পাদ্রির যৌন ইচ্ছা ও এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তৈরি এই সিনেমা সরাসরি ভারতীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ে। সিনেমার নগ্ন দৃশ্য, সাহসী সংলাপ ও ধর্মীয় উপস্থাপনের কারণে সেন্সর বোর্ড এটি বন্ধ করে দেয়। ছবিটি ‘সংখ্যালঘু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে’ এই যুক্তিতেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিচালক ভিনোদ পাধায়ের নির্মাণে এতে অভিনয় করেন শাইনি আহুজা ও সীমা রহমানি।
পাঁচ (২০০৩)
পাঁচ বন্ধুর অপরাধজগতে প্রবেশ এবং তার পরিণতি নিয়ে নির্মিত ‘পাঁচ’ ছিল অনুরাগ কাশ্যপের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। ছবিতে মাদক, সহিংসতা ও যৌনতা- সবই একসঙ্গে থাকায় সেন্সর বোর্ড বারবার বাধা দেয়। যদিও ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি, তবু মুক্তি পায়নি আজও কোনো প্রেক্ষাগৃহে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন কেকে মেনন, অদিত্য শ্রীবাস্তব, তেজস্বিনী কোলহাপুরী প্রমুখ।
কামাসূত্র : দ্য টেল অব লাভ (১৯৯৬)
ভাস্বতীর প্রাচীন যৌনগ্রন্থ ‘কামসূত্র’ অবলম্বনে নির্মিত এই ঐতিহাসিক প্রেমগাথায় ছিলেন রেজিনা ক্যাসান্দ্রা ও ইন্দিরা ভার্মা। ছবির নগ্নতা ও যৌন দৃশ্য ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী মনে করে সেন্সর বোর্ড নিষিদ্ধ করে দেয়। মজার বিষয়, এই ছবি আন্তর্জাতিক স্তরে সমাদৃত হয়। ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রেখা। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মীরা নায়ার।
মালিক (১৯৭২)
এই চলচ্চিত্রে যৌনতা ছাড়াও ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যৌনতার পাশাপাশি ধর্মীয় উপাদান ওই সময়ে বেশ বিতর্ক তৈরি করে। ফলে সেন্সর বোর্ড সরাসরি মুক্তির অনুমতি দেয়নি এটি। তবে দর্শকমহলে প্রশংসিত হয়েছে ছবিটি। বেশ কিছু ফিল্ম উৎসবেও হয়েছে প্রশংসিত। পরিচালক এস এম শাহিদ পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয় করেছেন রাজেশ খান্না ও শর্মিলা ঠাকুর।